Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বনে গেল গন্ধগোকুল, হাওড়ার দম্পতির পরিবারে আনন্দ ফিকে

ওদের দেখে আর ছবি তুলে দিন কেটে যেত। দেখতে দেখতে বাচ্চাদু’টি বড় হল। তারপর চার জন মিলে ঘরের মধ্যে দাপাদাপি শুরু করল।

বাগনানে গৃহস্থের বাড়িতে গন্ধগোকুল। —নিজস্ব চিত্র

বাগনানে গৃহস্থের বাড়িতে গন্ধগোকুল। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
বাগনান শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

সুখের সংসারে ছন্দপতন।

বাগনানের এক বৃদ্ধ দম্পতির ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল দুই গন্ধগোকুল। তারপর তাদের দুই সন্তান হয়। চার গন্ধগোকুলকে নিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটছিল বৃদ্ধ দম্পতির। তারপর হটাৎ পরিস্থিতি বদলে যায়। গন্ধগোকুলগুলির উৎপাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় গ্রামবাসীর। অভিযোগ আসতে থাকে ভুরিভুরি। এর পর হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় দু’টি বাচ্চা গন্ধগোকুল। ওই দম্পতির আশঙ্কা, মেরে ফেলা হয়েছে তাদের। বাকি দুই গন্ধগোকুলের প্রাণ সংশয় হতে পারে বুঝে মঙ্গলবার তাদের বন দফতরের হাতে তুলে দেন বাগনানের বেড়াবেড়িয়ার বাসিন্দা সৌরেন্দ্রশেখর বিশ্বাস এবং তাঁর স্ত্রী শিখাদেবী। সৌরেন্দ্রবাবু পেশায় চিকিৎসক। ঘর সামলান স্ত্রী শিখাদেবী। ওই দম্পতির ছেলেও চিকিৎসক। তিনি বাইরে থাকেন। তিনতলা বাড়িতে চার গন্ধগোকুল নিয়ে ভালই দিন কাটছিল ওই প্রৌঢ় দম্পতির।

সৌরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘বছর দুই আগের কথা। দেখতাম, ঘর থেকে ফলমূল সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারতাম না কারা সেগুলি নিয়ে যাচ্ছে। তারপর একদিন দেখলাম, দোতলার ঘরে খেলে বেড়াচ্ছে দুটি পুরুষ ও স্ত্রী গন্ধগোকুল। তখনই বুঝলাম, এই কাজ তাদের।’’ তারপর দুই গন্ধগোকুলকে বাড়িতে আশ্রয় দেন ওই দম্পতি। পরিবারের নতুন সদস্যদের নিয়ে আনন্দে মেতেছিলেন ওই দম্পতি। এরমধ্যে স্ত্রী গন্ধগোকুলটি জন্ম দেয় দুই সন্তানের। পরিবারের আনন্দ আরও বেড়ে যায়।

সৌরেন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘দুই সন্তানকে নিয়ে বিছানার খেলা করত গন্ধগোকুল দম্পতি। ওদের দেখে আর ছবি তুলে দিন কেটে যেত। দেখতে দেখতে বাচ্চাদু’টি বড় হল। তারপর চার জন মিলে ঘরের মধ্যে দাপাদাপি শুরু করল। বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র ওলটপালট করে দিত।’’ এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা হল তার পরে। ওই দম্পতির কথায়, ‘‘ এরপর প্রতিবেশীদের বাড়িতেও হানা দিতে শুরু করেছিল ওরা। প্রতিবেশীরা প্রায়ই নালিশ জানাতেন।’’ মাস দুয়েক আগে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় শিশু গন্ধগোকুল দু’টি। তারা বেঁচে রয়েছে কিনা, তা জানা নেই। এর পরেই ওই দম্পতির মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, বাকি দুই গন্ধগোকুলকে সরিয়ে না দিলে তাদেরও প্রাণ সংশয় হতে পারে।

মঙ্গলবার সকালে তিনতলার ঘরে খেলা করছিল দুই গন্ধগোকুল। তাদের ঘরে বন্দি করে দফতরে খবর দেন সৌরেন্দ্রবাবু। বন দফতরের কর্মীরা এসে খাঁচাবন্দি করে তাদের। দম্পতির কথায়, ‘‘এখানে থাকলে ওদের কেউ মেরে দেবে বলে আশঙ্কা ছিল।’’ উলুবেড়িয়া বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার সুকুমার সরকার বলেন, ‘‘দু’টি গন্ধগোকুলকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। ওদের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ দুই প্রাণীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ওই দম্পতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বন দফতর। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ওঁরা বোঝেন। তাই ওদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।’’

হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশমঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীদের বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Asian palm civet Adopted Family Couples
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy