Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে বিজেপি-টিএমসিপি সংঘর্ষ

আরামবাগে তুলকালাম

টিএমসিপি-র সভার জন্য সেই সময় ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। তাঁরা পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি।

কলেজের গেটের বাইরে হামলাকারীরা। —নিজস্ব চিত্র

কলেজের গেটের বাইরে হামলাকারীরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

ফের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। এ বার তার জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখল আরামবাগের কালীপুর।

বিজেপি সমর্থকদের ওই ধ্বনি শুনেই বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে জড়াল কালীপুরের নেতাজি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) কিছু সদস্য। রাস্তায় প্রথমে দু’পক্ষের ধাক্কাধাক্কি, তারপরে ইট ছোটাছুড়ি, শেষে বাঁশ ও খুর নিয়ে মারামারি— কিছুই বাদ গেল না। আহত হলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে দু’পক্ষের ১৩ জনকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে দু’জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ইটবৃষ্টিতে কয়েকজন পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথা ফাটে। শেষে বড় পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বিকেলে প্রায় আধ ঘণ্টা কলেজের গেটের সামনে ধর্না দেয় টিএমসিপি। পরে প্রতিবাদ-মিছিলও করে।

বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এ নিয়ে দু’দলের আকচা-আকচিও বাড়ছে। আরামবাগে ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির বহিরাগতেরা কলেজে অনুপ্রবেশ করছে, এই অভিযোগে এ দিন রাজ্য জুড়েই প্রতিবাদ-সভা ডেকেছিল টিএমসিপি। আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের গেটের বাইরেও বেলা ১১টা থেকে ওই সভা শুরু হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে শবদাহ করে ফিরছিলেন কিছু বিজেপি সমর্থক। টিএমসিপি-র মঞ্চের সামনে পৌঁছতেই তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ‘হরিবোল’-এর সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ও বলতে থাকেন। তাতেই আপত্তি জানান টিএমসিপি-র সদস্যেরা। শুরু হয়ে যায় গোলমাল। তাতে এলাকার মহিলারাও জড়িয়ে পড়েন। ওই পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন।

টিএমসিপি-র সভার জন্য সেই সময় ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। তাঁরা পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি। শেষে এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এসডিপিও অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ যথা সময়েই ব্যবস্থা নিয়েছে। বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গোলমালে যুক্ত সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

এ দিনের গোলমালের আঁচ অবশ্য কলেজে লাগেনি। ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটির অধীন পড়ুয়াদের দু’টি বিষয়ের পরীক্ষা সুষ্ঠু ভবেই হয়েছে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অসীম দে বলেন, ‘‘কলেজের ভিতরে কোনও অশান্তি হয়নি। যা হয়েছে রাস্তায়।” টিএমসিপি বিকেলে অধ্যক্ষের কাছে পরিচয়পত্র ছাড়া কলেজে কাউকে প্রবেশ করতে না-দেওয়া, ছাত্র সংগঠনে বাইরের কাউকে থাকতে না দেওয়া-সহ কিছু দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। অধ্যক্ষ জানান, যে সব দাবি উঠেছে, তা কঠোর ভাবেই কলেজে বলবৎ রয়েছে।

টিএমসিপি-র দাবি, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই বিজেপি হামলা চালায়। তাঁদের অন্তত ২৫ জন আহত হন। সেই দলে সংগঠনের রাজ্য সদস্য আবিররঞ্জন নিয়োগীও রয়েছেন। জখম জেলা টিএমসিপি সভাপতি গোপাল রায় বলেন, ‘‘বিজেপির দুষ্কৃতীরা মদ খেয়ে হামলা করেছে। পুলিশের সামনেই কয়েক জনকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের পক্ষে আরামবাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে প্রতিবাদে নামব।’’

পক্ষান্তরে, ওই কলেজের বিজেপি ছাত্র সংগঠনের সম্পাদক শুভঙ্কর রায়ের দাবি, ‘‘সকাল থেকেই টিএমসিপি আমাদের বিরুদ্ধে সভায় উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করছিল। তার আগে আমাদের সংগঠনের সব পতাকাও খুলে ফেলে দেয়। আমাদের মূল সংগঠনের কিছু মানুষকে অন্যায় ভাবে মারধর করাতে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছেন।” বিজেপি-র আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “টিএমসিপি পায়ে পা লাগিয়ে অশান্তি করল। মরা পুড়িয়ে আসার সময় কে কী বলল তা নিয়ে ওদের গাত্রদাহ কিসের? স্থানীয় মানুষই প্রতিবাদ করেছেন।”

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy