বাগনানের স্কুলে ক্লাস চলছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়ানোর জন্য ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে রিসোর্স সেন্টারের পড়ুয়াদের। হাওড়ার বাগনানের হারোপ মডেল কনভার্টেড জুনিয়র বেসিক প্রাথমিক স্কুলের ঘটনা।
বাগনান পূর্ব চক্রের বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যেলয়ে পাঠরত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য এই স্কুল ভবনে সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে আলাদা করে ক্লাস করানো হয়। একে বলা হয় ‘রিসোর্স সেন্টার’। স্কুলের নিয়মিত পঠন পাঠনের সঙ্গেই আলাদা ভবনে সপ্তাহে দু’দিন করে ১৯৪ জন পড়ুয়া নিয়ে এই রিসোর্স সেন্টার চলে। কিন্তু সমস্যা হয় মিড ডে মিল খাওয়ানোর সময়। যে স্কুলে তারা পড়ে, সেখানে চার দিন করে মিড ডে মিল পায়। কিন্তু রিসোর্স সেন্টারে দু’দিন তাদের জন্য মিড ডে মিল বরাদ্দ নেই। ফলে স্কুলের নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়ানোর আগেই ছুটি দিয়ে দিতে হয় তাদের। ওই দু’দিন খাওয়া জোটে না রিসোর্স সেন্টারের পড়ুয়াদের।
ওই রিসোর্স সেন্টারের স্পেশাল এডুকেটর সুজিত মান্না বলেন, ‘‘মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয়তা বুঝি। কিন্তু আমাদের হাত পা বাঁধা। অস্বস্তি এড়াতে আমরা আমাদের পড়ুয়াদের প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল খাওয়ানোর আগে আগে ছুটি দিয়ে দিই।’’
প্রথম শ্রেণির এক দৃষ্টিহীন ছাত্রের মা বলেন, ‘‘সকাল ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত টানা এখানে থাকতে হয় ছেলেকে। মিড ডে মিল দেওয়া হয় না। সেই জন্য মাঝে মাঝে আসতে চায় না।’’ একই অভিযোগ অন্যান্য অভিভাবকদেরও।
অভিযোগ অবশ্য শুধু মিড ডে মিল না পাওয়া নিয়েই নয়। অভিভাবকরা জানান, একটা সময়ে এই কেন্দ্রে আসার জন্য প্রতি পড়ুয়া দিনে ৫০ টাকা করে জলপানির খরচ পেত। সেটাও ২০১১ সাল থেকে বন্ধ। অভিভাবকদের দেওয়া হত ২০ টাকা করে যাতায়াত খরচ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেটাও। চতুর্থ শ্রেণির এক প্রতিবন্ধী ছাত্রের মা বলেন, ‘‘টোটো বা অটো ভাড়া করে এখানে আসতে অনেক পয়সা খরচ হয়ে যায়। যাতায়াত খরচের টাকাটাও যদি পেতাম কিছুটা সুরাহা হত।’
সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় ২০০৪ সাল থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য রিসোর্স সেন্টারগুলি চালু হয়। সপ্তাহে চার দিন তারা সাধারণ স্কুলে পড়ে। দু’দিন রিসোর্স সেন্টারে আসে। এখানে ‘স্পেশাল এডুকেটর’ তাদের ঘাটতিগুলি পূরণ করে দেন। জেলায় রিসোর্স সেন্টারের সংখ্যা ৩৪টি। বেশিরভাগই কোনও না কোনও স্কুল বাড়িতে চলে। কয়েকটি রিসোর্স সেন্টার চলে এসআই অফিসের সঙ্গে। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনীর হাওড়া জেলা সম্পাদক অজয় দাস জানান, জেলার কোনও রিসোর্স সেন্টারেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এইসব পড়ুয়াদের মিড ডে মিল দেওয়া হয় না। জলপানি এবং অভিভাবকদের যাতায়াত খরচের টাকাও বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘পঠন পাঠনের অবস্থাও ভাল নয়। প্রতিটি সেন্টারে নূন্যতম দু’জন করে স্পেশাল এডুকেটর দরকার। কিন্তু বাস্তবে ৩৪টি সেন্টারের জন্য আছেন ৪৩ জন। ফলে অনেক সেন্টার চলে ১ জন স্পেশাল এডুকেটর দিয়ে। এইভাবে কী সুষ্ঠ পঠন-পাঠন সম্ভব?’’ অল বেঙ্গল স্পেশাল এডুকেটর অ্যাসোসিয়েশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক সুজিত মান্না বলেন, ‘‘প্রতিটি স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করার দাবি আমরা বহুদিন ধরে করছি। তা না পূরণ হওয়ায় হয়রান হচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা।’’
রিসোর্স সেন্টারে মিড ডে মিল না দেওয়ার প্রসঙ্গে সর্বশিক্ষা দফতরের জেলা প্রকল্প দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা একদম বাঞ্ছনীয় নয়। স্কুলের নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গেই রিসোর্স সেন্টারে আসা পড়ুয়াদেরও যাতে মিড ডে মিল দেওয়া হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং তার অভিভাবকদের স্কুলে যাওয়ার জন্য পরিবহন ভাতা দেওয়া হয়। তাই আলাদা করে রিসোর্স সেন্টারে যাতায়াতের কোনও ভাতা দেওয়া হয় না।’’ স্কুল প্রতি দু’জন
স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy