Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

মৃত্যু মিছিলে আর কত? প্রশ্ন ঘোরে গোন্দলপাড়ায়

সূরজের বাবা রামু চৌধুরীও গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিন ছেলের মধ্যে বড় সূরজকে মিলে ঢুকিয়েছিলেন রামু। মিল বন্ধের পরে বাবা-ছেলে দু’জনেই বেকার হয়ে পড়েন। বছরখানেক আগে রোগে ভুগে রামু মারা যান। বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, একে অনটন, তার উপরে বাবার মৃত্যুতে সূরজ ভেঙে পড়েন। মাধবীদেবী বলেন, ‘‘ছেলেটা ইদানিং কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকত। বেশি কথা বলত না।’’

শোক: আত্মীয়দের সঙ্গে মাধবীদেবী (মাঝে)। —নিজস্ব চিত্র।

শোক: আত্মীয়দের সঙ্গে মাধবীদেবী (মাঝে)। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০২
Share: Save:

পড়শিদের ভিড় ভেঙে পড়েছিল চন্দননগরের গোন্দলপাড়ার পাঁচ নম্বর কুলি লাইনের একফালি ঘরটার সামনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ভিড়ের যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ছিল লাগোয়া চটকলের উপরে। তাঁদের খেদ, বন্ধ মিলটার জন্যই এ তল্লাটে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এই বাড়িরই বড় ছেলে, গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক সূরজ চৌধুরীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, মিল বন্ধ হওয়ায় স্থায়ী রোজগার হারান বছর তেইশের যুবকটি। কখনও জোগাড়ের কাজ করে, কখনও ফাইফরমাস খেটে যা রোজগার হচ্ছিল, তাতে সংসার চলছিল না। পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে উঠতে না পেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। মা মাধবীদেবীর গলায় আক্ষেপ, ‘‘মিলের জন্যই ছেলেটা চলে গেল? মিল কবে চালু হবে? না হলে তো এই ভাবে শ্রমিক মহল্লা শ্মশান হয়ে যাবে!’’

সূরজের বাবা রামু চৌধুরীও গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিন ছেলের মধ্যে বড় সূরজকে মিলে ঢুকিয়েছিলেন রামু। মিল বন্ধের পরে বাবা-ছেলে দু’জনেই বেকার হয়ে পড়েন। বছরখানেক আগে রোগে ভুগে রামু মারা যান। বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, একে অনটন, তার উপরে বাবার মৃত্যুতে সূরজ ভেঙে পড়েন। মাধবীদেবী বলেন, ‘‘ছেলেটা ইদানিং কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকত। বেশি কথা বলত না।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাশে কাকার ঘরে একাই ছিলেন সূরজ। রাত ৮টা নাগাদ মাধবীদেবী খাবার জন্য ডাকতে গিয়ে ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। চন্দননগর থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। নিয়মমাফিক অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ওই শ্রমিকের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

অভিযোগ, গত এক বছরে বন্ধ এই চটকলের চার শ্রমিক আত্মঘাতী হয়েছেন। টাকার অভাবে অনেকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সেই কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন অন্তত ২০ জন। ওই চটকলের বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিক শামু চৌধুরী বলেন, ‘‘মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমাদের এলাকাটা কেমন যেন ছন্নছড়া হয়ে গিয়েছে। দু’বেলা পেটপুরে খাবার টাকা নেই। বাচ্চাদের পড়াশোনা চালানো থেকে চিকিৎসা কোনও কিছুরই সামর্থ নেই। তাই কাউকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে। কেউ রোগে ভুগে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই।’’

শ্রমিক অসন্তোষ এবং আর্থিক দুরবস্থার কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৭মে মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝোলান কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেখানকার হাজার চারেক শ্রমিকের পরিবার বিপাকে পড়ে। এলাকার অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিল খুললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শ্রমিকরা বেতনও পাননি। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের মিল বন্ধ হয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy