উদ্যোগ: গুপ্তিপাড়ায় ক্রেনের সাহায্যে গঙ্গা থেকে তোলা হচ্ছে প্রতিমার কাঠামো। —নিজস্ব চিত্র।
ঘাট থেকে প্রতিমা তুলে নিয়ে ‘বিসর্জন’ দিচ্ছে ক্রেন। তারপর জল থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলেও আনছে। ভাসান শেষে পঞ্চায়েতের লোকজন গঙ্গায় ভাসতে থাকা বাকি আবর্জনা সরিয়ে নিচ্ছেন। সুষ্ঠু ভাবে দুর্গার বিসর্জন এবং গঙ্গাদূষণ রোধে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা এ বার দেখা গিয়েছে হুগলির গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে।
গত বছর পর্যন্ত বিসর্জনের কয়েক দিন পরেও যে ঘাটে প্রতিমার কাঠামো, ফুল-বেলপাতা গঙ্গায় ভাসতে দেখা যেত, সেখানে এ বার প্রায় ৪০টি প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয়েছে ওই ক্রেনের সাহায্যে। পরের দিন দিব্যি স্নান করা গিয়েছে। পঞ্চায়েতের কর্তারা জানিয়েছেন, জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানেও ক্রেনের সাহায্য নেওয়া হবে। প্রত্যন্ত গ্রামের এই ব্যবস্থা নিয়ে হুগলি শিল্পাঞ্চলের কিছু পুরসভাও এ বার ভাবতে শুরু করেছে। হাওড়ার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতে দামোদরে বিসর্জন এবং কাঠামো তুলে আনতেও এ বার ব্যবহার হয়েছে কপিকল (দেশি ক্রেন)।
উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত হুগলি শিল্পাঞ্চলে দুর্গাপুজো ছাড়াও বহু কালী, জগদ্ধাত্রী, সরস্বতী পুজো হয়। গঙ্গাতেই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। কিন্তু বিসর্জনের জেরে গঙ্গাদূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। অবশ্য কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘাটের পাশে ফুলমালা ফেলার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কোথাও দ্রুত কাঠামো তুলে ফেলে ঘাট সাফ করেও দেওয়া হয়। তবে, সর্বত্র তা হয় না। ফলে, জল দূষণ পুরোপুরি রোখা যায়নি। পরিবেশকর্মীদের অনেকে মনে করেন, যন্ত্রের সাহায্যে ভাসানের সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে ফেলা গেলে দূষণ অনেকটা আটকানো যাবে। তবে, সর্বত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা না নিলে এমন উদ্যোগ বৃথা যাবে।
ক্রেনের সাহায্যে প্রতিমা নিরঞ্জন হলে নদী-দূষণ কমবে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন পুরসভার কর্তারা। রিষড়ায় শতাধিক জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। অধিকাংশ প্রতিমাই গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘আমরাও জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনে ক্রেনের সাহায্য নেব ভাবছি।’’ উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘গুপ্তিপাড়ায় পঞ্চায়েতের লোকজনের সঙ্গে কথা বলব। এখানেও বিসর্জনে ক্রেন আনা যায় কিনা, দেখব।’’ একই কথা জানান শ্রীরামপুরের সাফাই বিভাগের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল গৌরমোহন দে।
কপিকলের সাহায্যে যাতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা যায়, সে জন্য এ বার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের উত্তর প্রসাদপুরের নিমতলায় চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের তরফে নতুন ঘাট তৈরি করা হয়। ভ্যানে চাপিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার জন্য দামোদরের বাঁধ থেকে ঘাট পর্যন্ত রাস্তাও তৈরি করা হয়। বিসর্জনের সময় ফুলমালা পাড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হয়েছে। প্রতিমা জলে নামিয়ে দড়ি দিয়ে কাঠামো পাড়ে বেঁধে রাখা হয়। মাটি ঝরে গেলে ঘণ্টাখানেক পরেই কপিকল দিয়ে কাঠামো তুলে ফেলা হয়।
পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল হক মোল্লা বলেন, ‘‘আগে দামোদরের বিভিন্ন খালে ও পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। কাঠামো তোলা হত অনেক পরে। ফলে, দূষণ ছড়াত। এ বার পঞ্চায়েতের আবেদনে সাড়া দিয়ে উদ্যোক্তারা দামোদরের নতুন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন।’’ এই উদ্যোগকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলেই জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।
অনেক ক্ষেত্রেই কাঠামো জল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভার পুজো উদ্যোক্তাদের উপরেই ছেড়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতে দেখা গিয়েছে, দামোদরের পাড়ের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা আছে প্রতিমার কাঠামো। সেগুলি জলে ভাসছে। উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘উদ্যোক্তারাই কাঠামো নিয়ে যাবেন। এখানে এটাই রীতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy