নেতৃত্বে: মণ্ডপের তত্ত্বাবধানে হাজির আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বপন নন্দী। নিজস্ব চিত্র
পূর্ত দফতর অনুমতি দেয়নি। তারপরেও রাজ্য সড়ক ‘দখল’ করে রবিবার পুজো মণ্ডপ তৈরির সূচনা করল আরামবাগ ২-এর পল্লি কল্যাণ সমিতি। আর নিজের বাড়ির সামনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরহাটি মোড়ের কাছে ওই মণ্ডপের তত্ত্বাবধান করলেন খোদ আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বপন নন্দী। তিনি ওই পুজো কমিটির উপদেষ্টা। সকালে খুঁটিপুজোতে হাজির হলেন আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা।
রাস্তা দখল করে পুজোর মণ্ডপ বা তোরণ তৈরিতে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। ভিড় সামাল দেওয়া মুশকিল হয়। প্রতি বছর পুলিশ প্রশাসন নিয়মমাফিক পুজো কমিটিগুলিকে সতর্কও করে। কিন্তু তার পরেও দেখা যায়, এক শ্রেণির পুজো উদ্যোক্তা রাস্তা দখল করেই পুজোর আয়োজন করেছেন। হুগলি জেলা পুলিশ এবং চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এ বার দাবি করেছে, কোথাও এতটুকু শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন,‘‘সমস্ত থানার ওসিদের বলা আছে, পুজো কমিটিগুলিকে বিধি মানতে সতর্ক হতে হবে। কারও সমস্যা করে বা যানবাহনের গতিরুদ্ধ করে কিছু করা যাবে না।’’
পুলিশের এই সতর্কবার্তার পরেও রবিবার আরামবাগের ২-এর পল্লি কল্যাণ সমিতির পুজো মণ্ডপের জন্য গৌরহাটি মোড় সংলগ্ন রাস্তার প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা দখল করে ঘিরে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। যেমনটি হয়ে চলেছে গত ১৮ বছর ধরে। অথচ, ওই রাস্তা দক্ষিণবঙ্গের অনেকগুলি জেলার সঙ্গে যু্ক্ত। ফলে, যানবাহনের চাপও থাকে সর্বক্ষণ। এ ভাবে পুজো আয়োজনে যানজটের আশঙ্কা করছেন গাড়ি-চালকেরা।
বেনিয়ম: ঘিরে রাখা হয়েছে রাস্তার অনেকাংশ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
পুরপ্রধান স্বপনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “যান চলাচলে যাতে অসুবিধা না হয়, সে রকম জায়গা ছেড়েই মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি অনুমতি আটকাবে না।” পুজো কমিটির সম্পাদক সুবীর দে বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি অনুমতি মিলবে। বিগত বছরগুলিতে যান চলাচলে কোনও অসুবিধা হতে দিইনি আমরা।’’ বিধায়ক বলেন, “অনুমতি নেওয়ার দায়িত্ব পুজো কমিটির। সেই প্রক্রিয়া কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।”
মহকুমা পূর্ত (নির্মাণ) দফতরের সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ওই পুজো কমিটিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাস্তা দখল করে পুজোর অনুমতি দেওয়া হবে না। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মহকুমা প্রশাসনের। আরামবাগের মহকুমাশাসক লক্ষ্মীভব্য তান্নিরু ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, অনুমতি ছাড়া কোনও পুজো করা যাবে না। আগামী সপ্তাহে পুজো কমিটিগুলিকে বৈঠকে ডাকা হবে।
শুধু আরামবাগ নয়, হুগলি গ্রামীণ এলাকার চণ্ডীতলা, সিঙ্গুর, তারকেশ্বরেও বেশ কিছু বড় পুজো রাস্তা দখল করে হয় বলে অভিযোগ। শিল্পাঞ্চলের মধ্যে চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, কোন্নগর এবং উত্তরপাড়াতে বড় পুজো হয়। এ সব জায়গাতেও দেখা যায় একই ছবি। চোখে পড়ে রাস্তা জোড়া তোরণ। কোথাও কোথাও সেই তোরণের উচ্চতা বিদ্যুতের তার ছুঁয়ে যায়। এ বার ইতিমধ্যেই পুজো প্রস্তুতিতে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের। কিন্তু শেষমেশ মণ্ডপ রাস্তা দখল করবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয় শিল্পাঞ্চলে।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বিধি মেনে পুজো উদ্যোক্তাদের মণ্ডপের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি থানা এলাকায় আইসি-রা মিটিং করছেন। যে সব পুজো মণ্ডপে ভিড় বেশি, সেখানে সিসিক্যামেরার ব্যবস্থা থাকবে। কেউ বিধি ভাঙলে পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা নেবে।’’
এ বার জেলার দমকলকর্তারাও সতর্ক। হুগলির ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সনৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার এবং চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আগুন থেকে মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। আমরা পুলিশকে পুজো কমিটিগুলিকে আগাম জানিয়ে দিতে বলেছি। পুজো মণ্ডপের প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ আলাদা করার কথাও পুলিশ জানিয়েছি।’’
গ্রামীণ হাওড়ায় অবশ্য রাস্তা দখল করে পুজোর অভিযোগ তেমন মেলে না বলে পুলিশের দাবি। বাগনান, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া এবং মহিয়াড়িতে বেশি পুজো হয়। তবে, সবই মাঠে। গ্রামীণ (জেলা) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় জানান, রাস্তা আটকে পুজোর অভিযোগ ওঠে না।তবু পুজো কমিটিগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
(অতিরিক্ত প্রতিবেদন: নুরুল আবসার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy