ফাইল চিত্র।
হাতে কিছু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ। আর ছিটেফোঁটা সরকারি জমিতে বনসৃজন।
ব্যাস, আপাতত এই দুই কাজেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে হাওড়া জেলার ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের। পুজো এসে গেল। কিন্তু গ্রামে ১০০ দিনের কাজ কার্যত নেই। কারণ, এতদিন ওই প্রকল্পে বেশিরভাগ শ্রমদিবস তৈরি হতো মাটি কাটার কাজে। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের জুন মাস থেকে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। বিকল্প কাজেও জোর আসেনি। ফলে, পুজোর মুখে শ্রমিকদের হাত খালি। কেনাকাটা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় রয়েছেন। ব্যবসা মার খাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরাও।
আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের সোমেশ্বর গ্রামের দুর্গা পাত্রের কথা ধরা পড়েছে সেই দুশ্চিন্তার সুর। তিনিও ওই প্রকল্পের শ্রমিক। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও একটা দিনও কাজ করলাম না। গত বছর কাজ করে পুজোর আগে পাঁচ হাজার টাকা মজুরি পেয়েছিলাম। মনের সুখে কেনাকাটা করেছিলাম। এ বারে কী হবে বুঝতে পারছি না।’’
ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্লে বলেন, ‘‘মাটি কাটার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুতেই জবকার্ডধারীদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন মহিলারা। সামনেই পুজো। পুজোর আগে কাজ করে তাঁদের হাতে বেশ কিছু টাকা আসত। সেই টাকা তাঁরা উৎসবের কেনাকাটায় খরচ করতেন। এ বারে তাঁদের হাত শূন্য।’’
ওই প্রকল্পের জেলা সেলের কর্তারাও সমস্যার কথা মানছেন। তবে, সেলের এক কর্তা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতগুলিকে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ‘সিকিওরড’ সফটওয়্যার শীঘ্রই চালু হয়ে যাবে। তাতে কাজ আরও বাড়বে বলে ওই কর্তার আশ্বাস।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকা সত্ত্বেও জেলায় এই সময়ে মোট শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছিল ২০ লক্ষ। অথচ, এ বছর এখনও পর্যন্ত শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১১ লক্ষ। গত বছর এই সময়ের মধ্যে এক এক জন জবকার্ডধারী কাজ পেয়েছিলেন ৪০ দিন করে। এ বছর এখনও পর্যন্ত সেই হার মাত্র ২৫ দিন। রসপুর পঞ্চায়েতে ২০০০ জন জবকার্ডধারী আছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে কাজ পেয়েছিলেন ১২০০ জবকার্ডধারী। গড়ে তাঁরা ৫৯ দিন কাজ পেয়েছিলেন। পরের অর্থবর্ষে ৪৮ দিন করে কাজ পেয়েছিলেন। এ বছর মাত্র ১০০ জন জবকার্ডধারী কাজ পেয়েছেন। তা-ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে এবং ছিটেফোঁটা সরকারি জমিতে বনসৃজন করে।
মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে কেন্দ্র ওই প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে জোর দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ঢালাই রাস্তা তৈরি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি, সরকারি পুকুর সংস্কার, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরি, সরকারি জমিতে বনসৃজন ইত্যাদি। কেন্দ্রের নতুন নির্দেশিকা নিয়ম অনুযায়ী, এই সব কাজের বিবরণ ‘সিকিওরড’ নামে নতুন সফটওয়্যারে ‘আপলোড’ করতে হবে। কিন্তু এই সফটওয়্যারে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং বনসৃজনের মতো কাজ ছাড়া বাকিগুলি এখনও ‘আপলোড’ করার পদ্ধতি চালু হয়নি। ফলে, আটকে গিয়েছে ওই সব কাজ। বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তাদের দাবি, সরকারি পুকুর নেই বললেই চলে। ফলে, পুকুর সংস্কারের প্রশ্নই নেই। সরকারি জমিতেই বনসৃজনের সুযোগও তেমন নেই। কারণ, বেশির ভাগ সরকারি জমিই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ফলে, মূলত কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়।
চলতি অর্থবর্ষের গোড়ায় নিয়মমাফিক প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত বার্ষিক পরিকল্পনা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠায়। তাতে ১০০ দিনের কাজের বেশিরভাগটা জুড়ে ছিল মাটি কাটার কাজ। কিন্তু জুন মাসের গোড়ায় কেন্দ্র মাটি কাটার সব কাজ বন্ধ করে দিতে বলে। নতুন করে এখনও পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করে উঠতে পারেনি পঞ্চায়েতগুলি। ফলে, কাজ নেই শ্রমিকদের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy