নিম্ন আদালতে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেলেও বালির তপন দত্তকে খুনের মামলায় পুলিশের তদন্ত নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। এলাকায় জলাভূমি ভরাটের বিরোধী তপনবাবু খুন হন ২০১১ সালের ৬ মে রাতে। তপনবাবুর দেহে ছ’টি গুলির ক্ষত পাওয়া গেলেও, মোটরসাইকেলে তাঁরই পিছনে বসা যুবক কী ভাবে অক্ষত থেকে গেলেন! এটাকেই সন্দেহজনক বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট।
স্বামীর খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ২০১২ সালে। শুক্রবার তারই শুনানি হয় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। নিম্ন আদালত ইতিমধ্যেই রায় দিয়েছে এই হত্যা মামলার। গ্রেফতার হওয়া পাঁচ অভিযুক্তকেই বেকসুর ঘোষণা করে মুক্তি দিয়েছে হাওড়া আদালত। সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে শুনানির সময় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত শুক্রবার তপনবাবুর স্ত্রীর আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “নিহতের মোটরসাইকেলের পিছনে যিনি বসে ছিলেন, তাঁর একটিও গুলি লাগেনি। অভিযোগকারী (পিছনে বসা ওই যুবক)-এর বক্তব্যে সন্দেহ হচ্ছে।”
প্রতিমাদেবীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে বিচারপতি জানতে চান, তপন দত্তকে কত দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল, তার কোনও তথ্য তাঁর কাছে রয়েছে কি না। বিকাশবাবু জানান, এমন কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই। বিকাশবাবু জানান, আততায়ীরা তপনবাবুকে লক্ষ করে আটটি গুলি ছুড়েছিল। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে, তাঁর দেহে ছ’টি গুলির ক্ষত মিলেছে। এর পরেই ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি দত্ত।
বিকাশবাবু এ দিন আদালতে অভিযোগ জানান, এই খুনের মামলার অনেক সাক্ষী বিগড়ে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। চাকরির লোভ দেখিয়ে তাঁদের বিগড়ে দেওয়া হয়েছে। বিকাশবাবু আদালতে এ-ও উল্লেখ করেন, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়-সহ বেশ কয়েক জনের নাম রয়েছে এই মামলায়। অথচ তদন্তকারীরা তাঁদের কাউকে সাক্ষী করেননি। এমনকী, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।
বিচারপতি দত্ত সরকারি আইনজীবী প্রদীপ রায়ের কাছে জানতে চান, তাঁর কী বলার রয়েছে। প্রদীপবাবু আদালতে জানান, মামলার আবেদনকারী প্রতিমাদেবী, নিহতের ভাই ও নিহতের ঘনিষ্ঠ দুই যুবক পুলিশের কাছে বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে কোথাও মন্ত্রী অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়নি। প্রতিমাদেবী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ জানিয়েছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, এই মামলার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। সরকারি আইনজীবী আদালতে আরও জানান, মামলার চার্জশিট পেশ করার সময় বা তার আগেও নিম্ন আদালতে প্রতিমাদেবী অথবা অভিযোগকারী, নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি। নিম্ন আদালতে তদন্ত নিয়েও কেউ অভিযোগ করেননি। বিচারপতি দত্ত জানিয়েছেন, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৯ জানুয়ারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy