—প্রতীকী চিত্র।
ধান কেনায় স্বচ্ছতা আনতে এ বার সর্বত্র বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করা-সহ কিছু পদক্ষেপ করেছে খাদ্য দফতর। হাওড়াতে নজিরবিহীন ভাবে চালকলগুলিকে এই প্রক্রিয়ার একেবারে বাইরে রাখা হয়েছে। সবটা নিয়ন্ত্রণ করছে জেলা খাদ্য দফতর। গত বছর পর্যন্ত ধান কেনার প্রক্রিয়ার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যেত চালকলের লোককে। হুগলিতেও চালকলে চাল নিয়ে যাওয়ার আগে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আগে অনেক ক্ষেত্রে চালকলগুলির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ শোনা গিয়েছে। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে রেশন ডিস্ট্রিবিউটর বাকিবুর রহমান এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ায় কড়া পদক্ষেপ হিসেবে এ বার হাওড়ায় চালকলগুলিকে ধান কেনার প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে কি না, স্বভাবতই সেই প্রশ্ন উঠছে।
জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, ধান কেনার কড়াকড়ির সঙ্গে বাকিবুর ও জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারের কোনও সম্পর্ক নেই। এই প্রক্রিয়া গত এক বছর ধরে চলছিল। এ বছর প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনায় বরাবর স্বচ্ছতা চায়। তার জন্যই নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’’
গত ১ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়েই খাতায়-কলমে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু হাওড়ায় এখনও সেই কাজে তেমন গতি আসেনি। ধান কাটা এখনও শেষ হয়নি। খাদ্য দফতর জানিয়েছে, এই জেলায় এ বার ২ লক্ষ ২৪ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।
জেলায় কিসান মান্ডিগুলিতে সরাসরি ধান কিনছে খাদ্য দফতর। তার বাইরে খাদ্য দফতরের অধীনস্থ সংস্থা অত্যাবশকীয় খাদ্য সরবরাহ নিগম, বিভিন্ন প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং বেনফেড-এর মতো সংস্থাগুলিকেও ধান কেনার দায়িত্ব দিয়েছে খাদ্য দফতর। প্রতিটি ক্রয় কেন্দ্রে খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বায়োমেট্রিক যন্ত্র। তাতে আঙুলের ছাপ দিয়ে তবে চাষি ধান বিক্রি করতে পারছেন। তার আগে চাষিকে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের নাম ‘রেজিস্ট্রেশন’ করাতে হচ্ছে।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব সংস্থা ধান কিনছে, প্রতিটি ক্রয় কেন্দ্রে তাদের তরফে একজনকে ‘পারচেজ অফিসার’ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিই ধান কেনার কাগজপত্র ঠিক করছেন। প্রতিদিন কত ধান কেনা হল, সেই হিসাব তিনিই খাদ্য দফতরে পাঠাচ্ছেন। ভবিষ্যতে ধান কেনার হিসাবে কোনও গরমিল ধরা পড়লে তার জন্য দায়ী হতে হবে সেই পারচেজ অফিসারকেই। হুগলিতে পারচেজ অফিসার নিয়োগ করার প্রথা থাকলেও হাওড়ায় এটা প্রথম বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর।
শুধু তা-ই নয়, আগে কিসান মান্ডি বাদ দিয়ে অন্যান্য ধান ক্রয় কেন্দ্রে খাতায়-কলমে বিভিন্ন সমবায় সমিতি বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কেনার দায়িত্বে থাকলেও বাস্তবে করত চালকলগুলি, এমনটাই দাবি করেছেন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অনেকে। তাঁরা জানান, চালকলের লোকই চাষিদের নাম কম্পিউটারে ‘এন্ট্রি’ করতেন। তারপরে ধান নিয়ে চালকলে চলে যেতেন। এখন চালকলের লোককে ধান কেনার প্রক্রিয়ার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। সব কাজ করছেন ধান কেনার দায়িত্বপ্রাপ্ত পারচেজ অফিসার। ধান কেনার প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই তা তুলে দেওয়া হচ্ছে চালকলের হাতে।
চালকল সংস্থাগুলি অবশ্য দাবি করেছে, অতীতেও ধান কেনার প্রক্রিয়ায় তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। শ্যামপুরে বেশ কয়েকটি এলাকার ধান যায় অঙ্কিত চালকলে। ওই চালকলের এক কর্তা বলেন, "চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমরা কেনার প্রক্রিয়ায় কোনও দিনই জড়িত ছিলাম না। এ বারেও নেই।’’
হুগলিতে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় চালকলগুলি একেবারে ব্রাত্য না হলেও সব পক্ষের সামনে ক্রয় কেন্দ্রে ওজন করে তবেই নিয়ে যেতে পারছে। চালকলের সংশ্লিষ্ট গাড়ির নম্বর এবং ছবিও তোলা হচ্ছে। অনিয়ম রুখতে এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক।
তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy