জিরাটের মিঁয়াপাড়ায় আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের নলকূপ বিকল। নিজস্ব চিত্র
গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। ভূগর্ভের জলস্তর নামছে। এই অবস্থায় হুগলির জিরাটে বিকল একটি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ প্রশাসন না-সারানোয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দ্রুত চেষ্টা করা হলেও নলকূপটি সারাতে বৈশাখ গড়িয়ে যাবে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে।
বলাগড় ব্লক আর্সেনিকপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত।
জিরাট পঞ্চায়েতের মিঁয়াপাড়ায় আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপটি বসানো হয় গত বছরের মে মাসে। পাশের দু’টি গ্রামের মানুষও এটির উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেপ্টেম্বরে বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন সেটির মোটর চুরি যায়। ফলে, বন্ধ হয়ে যাওয়া পাশের সাধারণ নলকূপ থেকে তাঁরা পানীয় জল নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে আর্সেনিক উঠে আসছে কি না, তা নিয়েই তাঁরা চিন্তিত। গত ৮ মাসে স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে বার বার জানানো হলেও, তারা উদাসীন।
স্থানীয় যুবক মিনাজুর রহমানের কথায়, ‘‘প্রয়োজন বুঝেই তো আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ বসানো হয়েছে। কেন দ্রুততার সঙ্গে সারানো হবে না?’’ তসলিমা বিবি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘পাশের যে নলকূপ থেকে এখন জল নিতে হচ্ছে, তাতে সকাল-সন্ধ্যায় ঘোলা জল ওঠে। শুধু দুপুরে পরিষ্কার। এটির হাতল নড়বড় করছে। এটিও খারাপ হলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। আমাদের রোজা চলছে।’’
রাজ্যের বহু গ্রামে আর্সেনিক নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাসের। এই নলকূপের সমস্যা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘গরমে জলস্তর নেমে গেলে আর্সেনিক উঠে আসার প্রবণতা অনেক বাড়ে। ফলে, বিষয়টি হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার।’’
পঞ্চায়েত প্রধান সুচন্দ্রা রায়ের বক্তব্য, ‘‘নলকূপটি পঞ্চায়েত সমিতি বসিয়েছে। বিষয়টি ওদের জানানো হয়েছে। পাশের নলকূপের বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’ জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মোটর, পাইপ-সহ কিছু জিনিস চুরি নিয়ে পুলিশে মামলা করা হয়। পুলিশের তদন্তের রিপোর্ট মেলেনি। তবে, আর দেরি না করে প্রচণ্ড গরমে মানুষের সমস্যার কথা ভেবে দরপত্র ডেকে ২০-২৫ দিনের মধ্যে নলকূপটি সংস্কার করা হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বলাগড়ে জলস্তর সাধারণত ৫০-৫৫ মিটার নীচে থাকে। গ্রীষ্মের শুরুতেই পাঁচ মিটার নীচে নেমে তা ৬০ মিটারে ঠেকেছে। চরকৃষ্ণবাটী পঞ্চায়েতের প্রধান দিবসী মাহাতো বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত জুড়ে ৩০০ ফুট গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তবে, তা পুরোপুরি আর্সেনিকমুক্ত কি না, জানি না।’’ তিনি আরও জানান, মাহাতোপাড়া ও রায়পাড়ায় দু’টি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ বসেছে। চারটি বুথে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলবাহিত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। দু’টি বুথে ওই ব্যবস্থা চালুর অপেক্ষা। তাতে অনেকটা সুরাহা হবে। তবে, আর্সেনিকমুক্ত আরও ৪টি নলকূপ বসলে আর্সেনিকের আশঙ্কা পুরোপুরি যাবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, জলের বিভিন্ন স্তরে আর্সেনিকথাকতে পারে।
গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগের দাবি, এখানে জলে আর্সেনিকের সমস্যা এখন কার্যত নেই। তাঁর বক্তব্য, আর্সেনিকের জন্য এই পঞ্চায়েতে ৩০টি নলকূপ বন্ধ করা হয়েছে। বিকল্প হিসাবে ১৩টি জলপ্রকল্প হয়েছে। একটি ওয়াটার এটিএম, একটি জলসত্রের কাজ চলছে। দেড় হাজার বাড়িতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলবাহিত বিশুদ্ধ জল পৌঁছেছে। এই কাজ চলছে। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা হওয়ায় গোটাবলাগড় ব্লকেই আর্সেনিকের সমস্যা অনেকটা মিটেছে।’’a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy