—প্রতীকী চিত্র।
হাওড়া শহর জুড়ে বেআইনি টোটোর উপদ্রব তো ছিলই। এ বার তার দোসর হয়েছে কাটা তেলে চলা ট্রলি ভ্যান বা ভ্যানো। শহরের অলিগলি, এমনকি, জি টি রোডেও চলছে এই মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী নিষিদ্ধ যান। মোটরযান আইনে এই ভ্যানো নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরে হাওড়া শহরের আশপাশে পুলিশ ভ্যানো ঢুকতে দিত না। কিন্তু গত এক বছরে দেখা গিয়েছে, এই নিষিদ্ধ যান পুলিশের চোখের সামনেই বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে, পণ্য পরিবহণ করছে। ভ্যানোর বায়ুদূষণ ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নাগরিকদের তাই প্রশ্ন, এই দৌরাত্ম্য কবে বন্ধ হবে? প্রশাসন সব জেনেও চুপ কেন?
এমনিতেই গত কয়েক বছরে হাওড়া শহরে যানশাসন কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, ২০১১ সালে পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে যে ভাবে যানবাহনের গতি বেড়েছিল, তা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে। একেই হাওড়া শহরে রাস্তা কম। কয়েকটি যে বড় রাস্তা আছে, সেখান দিয়ে অটো, টোটো, ভ্যানো, রিকশা, মোটরবাইক, সাইকেল-সহ নানা ধরনের যানবাহন চলে। যার জেরে ট্র্যাফিকের গতি তলানিতে পৌঁছেছে। এর উপরে রয়েছে রাস্তার দু’পাশ জুড়ে বেআইনি দখলদারি ও হকার-রাজ। সব মিলিয়ে বলা যায়, আগে যে দূরত্বে পৌঁছতে আধ ঘণ্টা লাগত, যানজটের কারণে এখন লাগে এক ঘণ্টা। রাস্তায় ভ্যানোর দাপট সেই যানজট পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। বর্তমানে এই ভ্যানোর মাধ্যমেই চলছে কারখানার মালপত্র এবং শহর জুড়ে চলা প্রোমোটিং ব্যবসার নির্মাণ সামগ্রীর পরিবহণ। এমনকি, হাওড়ার কয়েক জায়গায় যাত্রী পরিবহণও শুরু হয়েছে বলে খবর। অভিযোগ, বেআইনি ভ্যানো পুলিশের সামনে দিয়ে চলাচল করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পুলিশের নজরদারির অভাবেই শিকেয় উঠেছে ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার প্রবণতা। যে কারণে মোটরবাইক আরোহীরাও অনেকেই হেলমেট পরেন না হাওড়ায়। বর্তমানে হাওড়া শহরে ট্র্যাফিক পুলিশের ধরপাকড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিধি না মানাটাই যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্র্যাফিক সিগন্যালও মানতে চান না অনেকে।
মধ্য হাওড়ার বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘শুধু শহরে কেন, ভ্যানো কোথাওই চলতে পারে না। পুলিশের উচিত, অবিলম্বে ভ্যানো চলাচল বন্ধ করা।’’ সুভাষ জানান, এগুলি তৈরি হয় বাতিল বা পুরনো জেনারেটরের ইঞ্জিন দিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্যানোর ইঞ্জিনগুলি চালানো হয় কাটা তেল দিয়ে। যার ফলে ওই গাড়িগুলি থেকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বেরিয়ে বাতাসে মেশে। যা থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়।
কিন্তু কেন আটকানো যাচ্ছে না ভ্যানোর উৎপাত? এই দায় অবশ্য পরস্পরের উপরে চাপিয়েছে পুলিশ ও পরিবহণ দফতর। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হাওড়া ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্যানো দেখতে পেলে আটক করি। কিন্তু মোটরযান আইনে এই গাড়ি চলাচলের কোনও বিধি নেই। তাই এ ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরকেই উদ্যোগী হতে হবে।’’ হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিসার অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘ভ্যানো চলাচল বন্ধ করার দায়িত্ব পুলিশের। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নিই।’’
ভ্যানো চলাচলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাওড়ার নতুন ডিসি (ট্র্যাফিক) সুজাতাকুমারী বীণাপাণি। তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ যখন উঠেছে, ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy