কর্নিয়া সংগ্রহ করছেন আশিস। নিজস্ব চিত্র
বালি হোক বা শ্রীরামপুর কিংবা গঙ্গা পেরিয়ে সোদপুর। মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা কারও মৃত্যুর খবর পেলেই আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির তাঁর বাড়িতে। কর্নিয়া সংগ্রহ করে পাঠান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এই কাজের জন্য এক পয়সাও পান না তিনি। উল্টে, যাতায়াতের জন্য পকেট থেকে বেরিয়ে যায় বেশ কিছু টাকা। তবু করে যান এই কাজ। কারণ জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন, ‘‘কত মানুষ দেখতে পান না। আমার সংগ্রহ করা কর্নিয়া পেলে কেউ হয়তো আলো দেখতে পাবেন।’’
আশিসের বাড়ি কোন্নগরে। পেশায় টোটোচালক। বাড়ির অবস্থা সচ্ছল নয়। রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ছেলে। টোটো চালিয়েই পরিবারের সকলের সব প্রয়োজন মেটান। তার মধ্যেইচলে কর্নিয়া সংগ্রহের কাজ। আট বছর ধরে যা তিনি করে চলেছেন নিরন্তর ভাবে। বিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত তিনি।
আশিস জানান, কর্নিয়া সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ তিনি পেয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগে গিয়ে দেখেছিলাম, কত মানুষ দেখতে পান না। তাঁদের অসহায়তা দেখেই ঠিক করেছিলাম, মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হব। তার পরে, সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। শংসাপত্র পাওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশো জোড়ার বেশি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছি।’’
শুধু হুগলি নয়, হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার অনেক জায়গায় কর্নিয়া সংগ্রহে গিয়েছেন আশিস। সংগৃহীত কর্নিয়া কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জমা দিয়ে বাড়ি ফেরেন। এই কাজে দক্ষ কর্মীর বড়ই অভাব, জানাচ্ছেন আশিস।
বছর দু’য়েক আগে করোনা-পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয় কানাইপুরের প্রবীণ বাসিন্দা সোমনাথ জানার। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। করোনা-নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ থাকায় আদৌ তাঁর বাবার চোখ দু’টি দান করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন মৃতের ছেলে সৌরভ। তাঁর কথায়, ‘‘পরিচিত এক বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মীকে বাবার ইচ্ছার কথা জানাতে তিনি আশিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উনি এসে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। এই কাজ খুবই সময় সাপেক্ষ। উনি কর্নিয়া জমা দিতে মেডিক্যালেও গিয়েছিলেন। এর জন্য একটি পয়সাও নেননি।’’
আশিসের প্রতি কৃতজ্ঞ কোন্নগরের ঝিলপাড় এলাকার বাসিন্দা সুদীপ্ত চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আমার পরিবারের একজনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেক অসুবিধার মধ্যেও তাঁর কর্নিয়া সংগ্রহ করে মেডিক্যালে জমা দিয়েছিলেন আশিস। বালি থেকে শুরু করে শ্রীরামপুর— সর্বত্রই কর্নিয়া সংগ্রহে যান তিনি।’’
কোন্নগর আই ব্যাঙ্ক সোসাইটির সম্পাদক অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আশিস আমাদের সঙ্গে বহুদিন ধরে যুক্ত। আমাদের উদ্যোগেই ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেয়। এক সময় ও আমাদের দেখেই মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। এখন ও আমাদের সংগঠনের প্রধান স্তম্ভ।’’
আশিস জানান, কর্নিয়া সংগ্রহে গেলে সে দিন টোটো চালানো হয় না। ফলে হয় না রোজগারও। তবে তাতে খেদ নেই তাঁর। আশিস বলেন, ‘‘আমার পরিবারের চাহিদা খুবই কম। তাই কোনও সমস্যা হয় না। পরিবারের সদস্যেরাও আমাকে এই কাজে উৎসাহ জোগান।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘মৃতজনে প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। অন্ধজনে আলো দেওয়ার কাজই আমার ব্রত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy