Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Swasthya Sathi

স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে বিড়ম্বনায় তৃণমূল

এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

পীষূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৬
Share: Save:

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পকে শাসকদল প্রচারের মূল হাতিয়ার করেছে। কিন্তু এই প্রকল্পই অনেক জায়গায় তৃণমূলের কাছে হয়ে উঠেছে বিড়ম্বনার কারণ।
খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা নবকুমার বেরার পায়ে বেলকাঁটা ফুটে সেপটিক হয়েছিল। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে ছুটেছিলেন আরামবাগের একটি নার্সিংহোমে। কিন্তু বিনামূল্যে চিকিৎসা পাননি তিনি। তারপর পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে গিয়ে অভিযোগের ঝাঁপি উপুড় করে দিয়েছেন নবকুমারের ছেলে শিবকুমার।


এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এ কথা স্বীকারও করছেন তৃণমূল পরিচালিত একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁদের বক্তব্য, কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করা যাবে, তা ঠিক মতো প্রচার না-হওয়ায় ছোটখাট সমস্যা নিয়ে নার্সিংহোমে দৌড়চ্ছেন বহু মানুষ। চিকিৎসা না-পেয়ে ফিরে এসে প্রশাসনের মুণ্ডপাত করছেন তাঁরা। ফলে, স্বাস্থ্যসাথীকে গরিবের ‘মুশকিল আসান’ বলে শাসকদলের প্রচার কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা তৃণমূলের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে।
খানাকুল ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত ঘোষপুরের পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলি বলেন, “দলের নির্দেশ মতো বিনা পয়সায় চিকিৎসার প্রচার করে চলেছি। এ দিকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে পরিষেবা না-মেলার প্রচুর অভিযোগ উঠছে। সমালোচনার ঝড় আছড়ে পড়ছে আমাদের উপরে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় কী কী পরিষেবা মিলবে, তা আমাদের যেমন জানা নেই, তেমনই জানা নেই উপভোক্তাদের। এ নিয়ে সরকারি স্তরেও কোন প্রচারও নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা নিয়ে ধারণা অস্পষ্ট। এতে হিতে বিপরীত না হয়ে যায়!”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পায়ে বেলকাঁটা ফুটুক বা ফোঁড়া হোক—স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে তালিকাভুক্ত নার্সিংহোম উপভোক্তাদের বিনা পয়সায় পরিষেবা দিতে বাধ্য। পরিষেবা না পেলে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ করব। তদন্ত করে প্রয়োজনে নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করে দেব।”
রঘুনাথপুরের বাসিন্দা নবকুমারের ছেলে শিবকুমার বেরা বলেন, ‘‘বেলকাঁটা ফুটে বাবার পা ফুলে উঠেছিল। কষ্ট পাচ্ছিলেন। আরামবাগ শহরের বেনেপুকুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও নার্সিংহোম ৩৫ হাজার ৯২২ টাকা বিল করেছে। এ নিয়ে ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছি। এখনও কিছু ফয়সালা হয়নি।” সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের তরফে হাসিবুর রহমান বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ওই পরিষেবা মিলবে না বলেই তা দেওয়া হয়নি।”
ঘোষপুর পঞ্চায়েতের সদস্য লিয়াকত আলি খান হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে আরামবাগের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সাত দিন ভর্তি থাকার পরে ২৬ হাজার টাকা বিল মেটাতে হয়েছে।” প্রধানের আক্ষেপ, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমি নিজে গিয়েও কিছু করতে পারিনি।” যদিও ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে শেখ ইব্রাহিম দাবি করেন, “ভর্তির সময় উনি বোধ হয় কার্ড দেখাতে পারেননি।’’
বিডিও (খানাকুল ১) দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “যে অভিযোগগুলি জমা পড়েছে, সেগুলি সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমকে জানানো হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমাধান হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।”
আরামবাগ শহরের অন্য আর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা ইন্দ্রনীল হাজরা। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল তাঁর পা। ইন্দ্রনীলের অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য সাত হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’’
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে কোন কোন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে? চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নার্সিংহোমের মালিকেরা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। উপভোক্তাদের একাংশের অভিযোগ, প্রশ্ন করলে নার্সিংহোম মালিকেরা বলছেন, ‘সরকারি ওয়েবসাইট দেখে জেনে নিন।’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Swasthya Sathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy