Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India Jutemill

ইন্ডিয়া জুটমিল বন্ধের তিন বছর পূর্ণ, শ্রমিক তিমিরেই

আর্থিক সঙ্কট, কাঁচা পাটের অভাব, বিশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ মে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

তিন বছর পূর্ণ হল শনিবার। এত দিন ধরে মেশিন চলেনি শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলে। বিধানসভা ভোটের আগে বলা হয়েছিল, গত পয়লা এপ্রিল থেকে চালু হবে উৎপাদন। তার পরে দু’মাস কেটে গেলেও তার নামগন্ধ নেই। দুর্দশাই সঙ্গী শ্রমিকদের। মিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত।

এখানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। আর্থিক সঙ্কট, কাঁচা পাটের অভাব, বিশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ মে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জানুয়ারি কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে উৎপাদন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। রক্ষণাবেক্ষণের কাজও শুরু হয়। কিন্তু ঘোষণাই সার, উৎপাদন চালু হয়নি। এই জেলাতেই অবশ্য একই মালিকানাধীন দু’টি জুটমিল চলছে।

মহম্মদ শাকিল ইন্ডিয়া-র তাঁত বিভাগের স্থায়ী শ্রমিক। মা, স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। মেয়ে কলেজছাত্রী। এক ছেলে স্কুলে পড়ে। অপর ছেলে এই মিলেই অস্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। মিল বন্ধ হওয়ায় শাকিল অন্যের টোটো ভাড়া নিয়ে চালান। তাতেই কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছিল। করোনা-পর্বে কড়া বিধিনিষেধে তা-ও বন্ধ। ফলে, পরিবারটির কার্যত হাবুডুবু অবস্থা।

শাকিল বলেন, ‘‘কারও জরুরি দরকারে ‘রিজার্ভ’ ভাড়া পেলে যাচ্ছি। তাতেই যে টুকু আসছে। এ ভাবে সংসার চলে!’’ একই সমস্যায় ভুগছেন আর এক শ্রমিক রাজু সাউ। মা, স্ত্রী, চার বছরের মেয়ে এবং বোনকে নিয়ে সংসারে তিনি একাই রোজগেরে। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও ভ্যান চালাচ্ছি, কখনও মিস্ত্রির টুকটাক কাজ করি। কখনও কারও দোকানে ফরমাস খাটি। কেন যে মিলের চাকরিতে ঢুকেছিলাম!’’

রাজু, শাকিলের মতো অনেক শ্রমিকই ভেবে পাচ্ছেন না, উৎপাদন কবে চালু হবে। হলেও কত দিন ভাল ভাবে চলবে, সেই চিন্তাও উঁকি দিচ্ছে মনে। এই প্রশ্নও অনেকে ছুড়ে দিচ্ছেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে মিল খোলার কথা ঘোষণা হল। অথচ, খুলল না। তা হলে সেই চুক্তির কোনও মূল্য নেই? ভোটে জেতার জন্যই মিল খোলার কথা জানানো হয়েছিল কিনা, সে কথাও উঠছে।

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক বা শিল্প সম্পর্কে সরকারের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এআইটিইউসি অনুমোদিত ফেডেরাল চটকল মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্তের ক্ষোভ, ‘‘রাজ্য সরকার চুপচাপ বসে আছে। শ্রমিকের হাতে পয়সা নেই। অথচ রাজ্যের কোনও উদ্যোগ নেই।’’ এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বেঙ্গল জুটমিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘নিজেদের সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষ এতগুলো দিন কাটিয়ে দিল। তার পরে রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় সব বুঝে নিয়ে শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে মিল খোলার কথা বলেও তা ভাঙা হল। অদ্ভুত! উৎপাদন চালু করতে সরকারের তৎপরতা দরকার ছিল।’’ তাঁর সংযোজন, যত দিন উৎপাদন চালু না হচ্ছে, শ্রমিকদের রান্নার গ্যাস-সহ রেশন বিনামূল্যে দেওয়া উচিত।

শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায় জানান, মিল খোলার রাস্তা পরিষ্কার করতেই সেখানকার জমি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে এর আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন। উৎপাদন চালুর জন্য তিনি শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার সঙ্গে কথা বলছেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আর্জিও জানাবেন।

মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জমি-সমস্যা মিটেলেও সেই সংক্রান্ত ইজারা-দলিল এখনও হাতে আসেনি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

suspension of work India Jutemill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy