এই স্কুলের পিছনেই খোলা শ্মশান। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কবে গোঘাটের পাতুলসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হবে আর কবে ছুটি, না জানেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা, না জানে ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলের গায়েই খোলা শ্মশান। কাঠের চিতায় দেহ দাহ করা হয়। দিনেরবেলা শবদেহ এলেই স্কুল ছুটি।
১৯৫১ সালে স্কুলটি চালু হয়। তখন থেকে এ ভাবেই চলে আসছে পঠনপাঠন। না আছে স্কুলের প্রাচীর, না শ্মশানের। চিতার উপরে কোনও চিমনিও নেই। ফলে, দেহ পোড়ার দুর্গন্ধ এবং দূষণে জেরবার হতে হয় সকলকে। এ জন্যেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয় জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সাহেব মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুল থেকে শ্মশানের দূরত্ব ৫০ ফুটও নয়। রোজ দেহ আসে এমন নয়। যে দিন আসে, পরের কয়েকদিন ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি খুব কম থাকে। ওরা ভয়ও পায়।’’
সম্প্রতি ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে স্নান করতে নেমে জলে ডুবে মারা যায়। ওই শ্মশানেই তাকে দাহ করা হয়। এই ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় পড়ুয়াদের মধ্যে। তারপরেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিষয়টিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিভিন্ন মহলে লিখিত আবেদন করলেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষর উদ্যোগে পুকুর পাড়ের ওই শ্মশান সরানো নিয়ে গ্রাম স্তরে কয়েকবার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। সাহেব জানান, সম্প্রতি ওই শ্মশানে সহপাঠীর দেহ দাহের বিষয়টা শিশুদের আরও বিধ্বস্ত করেছে। অবিলম্বে পঠনপাঠন স্বাভাবিক করতে শ্মশানটি সরানোর দাবি জানিয়ে বিডি-সহ বিভিন্ন মহলে আবেদন করা হয়েছে। স্কুলটিতে প্রাচীরের জন্যেও তহবিল চেয়ে শিক্ষা দফতরে আবেদেন করা হয়েছে।
গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও সুরশ্রী পাল বলেন, “ইতিমধ্যে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। জায়গাটি শ্মশান হিসাবে ‘রেকর্ড’ নেই। জায়গা দেখে শ্মশানটি সরানোর জন্য প্রধানকে বলেছি।” সংশ্লিষ্ট কুমুড়শা পঞ্চায়েতের প্রধান উত্তম মুদি বলেন, “শ্মশানটি সরানোর জন্য একটি খাসজমি পাওয়া গিয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘অর্জুন পুকুর’ নামে শ্মশান সংলগ্ন পুকুরটির অংশীদার প্রায় ৫০টি পরিবার। ওই পরিবারগুলিরই শতাব্দীপ্রাচীন শ্মশানটি ব্যবহার করে। পুকুরের অংশীদার একটি পরিবারের সদস্য তথা স্কুলের ‘গ্রাম শিক্ষা কমিটি’র সভাপতি চন্দনা পাল এবং তাঁর স্বামী প্রদীপ বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই ওখানে দাহ কাজ চলে আসছে। স্কুলের জায়গাটাও আমরা অংশীদাররাই দান করেছি। আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরাই ওখানে পড়ে। স্কুল ও শ্মশান কাছাকাছি নিয়ে আমাদেরও বিষয়টা খারাপ লাগছে। কিন্তু বিষয়টা স্পর্শকাতর। শ্মশান যাতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সে ব্যাপারে আমরা বারবার আলোচনাতেও বসছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy