কাকা পঞ্চায়েত প্রধান। ভাইপো এক নাবালিকাকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছিলেন। প্রধান সব জেনেও চুপ করে ছিলেন বলে অভিযোগ। শেষে খবর পেয়ে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করল। শ্বশুরবাড়ি থেকে বালিকা-বধূ ফিরল বাবা-মায়ের কাছে। হুগলির পান্ডুয়া ব্লকের একটি পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা।
১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ। কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে আটকাতে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। অল্প বয়সে বিয়ে আটকাতে সরকারি বিভিন্ন দফতরের হাতে দায়িত্ব রয়েছে। পঞ্চায়েত তার অন্যতম। অথচ, শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর অভিযোগ উঠল। সার্বিক ভাবে প্রশাসনের তৃণমূল স্তরে সচেতনতা কতটা রয়েছে, সেই প্রশ্ন ফের তুলে দিয়েছে এই ঘটনা।
সাত মাস আগে পাশের বলাগড় ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্যার দুই ছেলেরই বিয়ে নাবালিকার সঙ্গে হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তার মধ্যে আবার ছোট ছেলের বিয়ের বয়স হয়নি। সেই সময় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, এমন ঘটনা আটকাতে জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করা হবে। সেই কাজ কতটা এগিয়েছে, প্রশ্ন তাতেও। বলাগড়ের ঘটনাটির ক্ষেত্রে দুই কিশোরীকে হোমে পাঠানো হয়েছিল চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার ওই পঞ্চায়েতের প্রধানের ভাইপোর সঙ্গে যে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে, সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বয়স সতেরো বছর। যুবকটি গোয়ায় কাঠের কাজ করে। গত অক্টোবর মাসে সেখানে পালিয়ে গিয়ে দু’জনে বিয়ে করে। এক-দেড় মাস পরে ফিরে আসে। মেয়েটি তখন থেকেই শ্বশুরবাড়িতেই থাকছিল। কিছু দিন আগে যুবকটি কর্মস্থলেফিরে যান।
বিষয়টি সূত্র মারফত প্রশাসনের কানে পৌঁছয়। গত ৩০ ডিসেম্বর বিডিও দফতর, থানা, চাইল্ড লাইনের আধিকারিক প্রধানদের বাড়িতে যান। মেয়েটি সেখানেই ছিল। তবে, তার বিয়ের কথা প্রথমে আত্মীয়ের মানেননি। পরে দেখা যায়, যুবকটির ঘরে মেয়েটির যাবতীয় জিনিসপত্র রয়েছে। মেয়েটি জানায়, ওই যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তবে, বাড়ি থেকে অন্য পাত্র দেখা হচ্ছিল। সেই কারণে সে এই বয়সেই বিয়ে করেছে। বাড়ির লোকজন প্রশ্ন তোলেন, স্বামী অন্য রাজ্যে। মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে থাকলে সমস্যা কোথায়?
প্রশাসন ওই যুক্তিতে কান দেয়নি। তাদের তরফে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভার্চুয়াল ভাবে সিডব্লিউসি-র সামনে হাজির করা হয়। সামনে পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে ওই কমিটি তাকেবাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়।
ওই প্রধানের বক্তব্য, ‘‘ভাইপোর সঙ্গে মেয়েটির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। আমরা তা জানতাম না। গোয়ায় যাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ভাইপোকে বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনি। প্রশাসনকে জানাই। মেয়েটি নিজের বাড়িতেই আছে।’’ আপনাদের বাড়ি থেকেই তো প্রশাসনের তরফে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। আপনাদের বাড়িতে কেন থাকছিল? উত্তর এড়িয়ে যান প্রধান।
প্রশাসন সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ে আটকানোর ব্যাপারে পঞ্চায়েত সদস্যদের সচেতন করা হয়। বিয়ের বয়স, মানসিক ও শারীরিক বিষয়, নিরাপদ মাতৃত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পঞ্চায়েত প্রধানের বিশেষ দায়িত্ব থাকে। পান্ডুয়ার এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘প্রশাসন তো নাবালিকা বিয়ে বন্ধে নানা জায়গায় প্রচার চালাচ্ছে। আগে নিজেদের সচেতন হওয়া দরকার।’’
তথ্য: সুশান্ত সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy