প্রতীকী ছবি।
ওদের কেউ এখন সাইকেল গ্যারাজের কর্মী, কেউ ওষুধের দোকানে খাতা লেখার কাজ করছে। কারও পরিবারের আবার স্মার্টফোন কেনার সঙ্গতি নেই। ফলে অনলাইন ক্লাসেরও বালাই নেই। অথচ দু’বছর আগে এই কিশোর-কিশোরীরাই নিয়ম-মাফিক স্কুল যেত। পরীক্ষা নিয়ে ভয় ছিল কতজনের! করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে তাদের জীবন।
নভেম্বরের মাঝামাঝি স্কুলে শুরু হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পঠনপাঠন। কয়েকজন পড়ুয়ার গরহাজিরা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন চুঁচুড়ার কাপাসডাঙা সতীন সেন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নবম ও দশম মিলিয়ে ১২০ জন পড়ুয়াদের মধ্যে সাত জন আসছিল না। আর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির যে পড়ুয়াদের অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, সেখানেও দেখা মিলছিল না জনা ১৭ জনের। বৃহস্পতিবার সেই স্কুলছুটদের খোঁজেই ছিল অভিযান।
এ দিন কাপাসডাঙা বাঁশতলায় এক ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে তার দেখা মিলল না। রান্নায় ব্যস্ত মা জানালেন, ‘‘লকডাউনে ওর বাবার কাজ চলে গেল। ছেলেটাকে তাই এক বছর হল, একটা সাইকেলের গ্যারাজে কাজে ঢুকিয়েছি। না হলে সংসার যে আর টানতে পারছি না!’’
দ্বিতীয় হুগলি মোড় এলাকার বিদ্যাসাগর কলোনিতে এক ছাত্রীর বাড়ি গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। পাঁচ সদস্যের সেই পরিবারে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোরীই সর্বকনিষ্ঠ। সংসার টানতে সেও মাস দু’য়েক ধরে একটি ওষুধের দোকানে কাজে লেগেছে।
পাশেই আয়মা কলোনির সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের বাড়ি গিয়ে জানা গেল, অভাবের সংসারে ‘বড় ফোন’ (স্মার্টফোন) কেনার ক্ষমতা হয়নি। তাই ক্লাসও করা হয়নি। ছেলেটির বাবার কথায়, ‘‘মাসে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার টাকা জোগাড় করতে নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছি। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ফোন কিনতে পারব না।’’
অতিমারি যে শিক্ষার বড় ক্ষতি করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেই ক্ষত আর ক্ষতির পরিমাপ যে কতটা, প্রতিদিন সেটা টের পাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই পরিস্থিতিতে স্কুলছুটদের ফেরানো ও পড়াশোনার ঘাটতি মেটানোই মূল লক্ষ্য তাঁদের।
এ দিন স্কুলছুটদের পরিজনদের সাহায্যের আশ্বাস দেন শিক্ষকরা। চাল, আলু, ডাল-সহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের বাড়িতে। বই-খাতা, স্কুলের পোশাক দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। অনেকের স্কুলের মাইনেও মিটিয়ে দেন শিক্ষকরাই। অভিভাবকদের বোঝানো হয়, যাতে ফের তাঁরা স্কুলে পাঠান সন্তানকে।
বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘সংসার টানতে গিয়ে এই কিশোর-কিশোরীদের পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে যন্ত্রণার আর কীই বা হতে পারে! আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, তাদের স্কুলে ফেরাতে।’’
প্রধান শিক্ষক তরুণকান্তি কুমার বলেন, ‘‘টাকার কাছে আমাদের এই অনুরোধের কতটা দাম, সেটা বলতে পারব না। তবে কয়েক দিন ধরে বুঝিয়ে সাত জনকে স্কুলে ফেরানো গিয়েছে। এই আকালের সময়ে সেই সংখ্যাটা মন্দ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy