অপেক্ষা: পাত পড়েছে আমতার কাষ্ঠ্যসাংড়া শিবানী ফ্রি প্রাথমিক স্কুলে। বুধবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জেরে পড়ুয়াদের রান্না করা খাবার দিতে গিয়ে প্রতি মাসে নিজের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার খানেক টাকা। তাই প্রকল্প চালানোর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরে চিঠি দিলেন আমতার কাষ্ঠ্যসাংড়া শিবানী ফ্রি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিবেকানন্দ জাসু। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমি প্রধান শিক্ষক নই। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। গাঁটের কড়ি খরচ করে আমাকে মিড ডে মিল চালাতে হচ্ছে। পান থেকে চুন খসলেই আমাকে দায়ী করা হচ্ছে। হয় মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানো হোক। নয়তো আমাকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’’
জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই শিক্ষককে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য শো-কজ় করা হয়েছিল। তার উত্তর তিনি দিয়েছেন। সেই উত্তরের সঙ্গে মিড ডে মিলের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অবর স্কুল পরিদর্শককে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে।’’
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ অগস্ট। ওই দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ আমতা-১ ব্লক প্রশাসনের তরফে স্কুলে মিড মিল কেমন চলছে তা পরিদর্শনে যাওয়া হয়। প্রতিনিধিরা দেখেন, রান্না করা খাবারের বদলে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটিও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা জানান আমতা পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শককে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে শো-কজ় করা হয়। তাঁর কাছ থেকে দু’টি বিষয়ে উত্তর চাওয়া হয়। প্রথমত, কেন স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, কেন ওই দিন মিড ডে মিলে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়নি।
বিবেকানন্দবাবু উত্তর দিয়ে জানান, ওইদিন ছিল শনিবার। এমনিতেই দেড়টা পর্যন্ত স্কুল চলার কথা। পাড়ায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকায় অধিকাংশ পড়ুয়া রান্না করা খাবার খাবে না বলে আগাম জানিয়ে দেয়। সেই কারণেই তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কায় ১টা ১৫ মিনিটে ছুটিদেওয়া হয়।
শো-কজ়ের জবাবের সঙ্গেই বিবেকানন্দবাবু আলাদা করে একটি চিঠি লিখে মিড ডে মিলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জি জানান। চিঠির বয়ান অনুযায়ী তাঁর বক্তব্য হল, পড়ুয়াপিছু স্কুলকে দৈনিক খরচ দেওয়া হয় ৪ টাকা ৯৭ পয়সা করে। কিন্তু ভোজ্য তেল এবং মশলাপাতির দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে তিনি সেই খরচের মধ্যে মিড ডে মিলকে ধরে রাখতে রাখতে পারছেন না। নিজের বেতন থেকে প্রতি মাসে বাড়তি ৫০০-১০০ হাজার টাকা করে তাঁকে দিতে হচ্ছে প্রকল্পটি চালাতে। এটা তাঁর পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। চিঠিতে তিনি প্রতিটি সামগ্রীর কী ভাবে দাম বেড়েছে এবং তার জন্য বরাদ্দ থেকে কত টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে তার নির্দিষ্টহিসাবও দিয়েছেন।
স্কুলটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫ জন। গড়ে উপস্থিত হয় ৩৮ জন করে। তাদের সংখ্যা ধরেই খরচ দেওয়া হয়। বিবেকানন্দবাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি হলে খরচ সামাল দেওয়া যেত। কারণ কিছু খরচ আছে যা পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলেও একই থাকে। তাতে মোট খরচে সাশ্রয় হয়। কিন্তু আমার স্কুলে তার উপায় নেই। ফলে খরচ বেড়েই চলেছে আর কোপ পড়ছে আমার বেতনে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy