—প্রতীকী চিত্র।
প্রধান, উপপ্রধান পদে নাম পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বলাগড় ব্লকের ১৩টির মধ্যে অর্ধেক পঞ্চায়েতেই সেই ‘হুইপ’ মানেননি দলের সদস্যেরা। ভোটাভুটি হয়েছে। ফলে দলের রাশ কতটা শক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন ঘুরছে।
বিরোধীরা আবার বলছেন, বলাগড়ে প্রস্তাবিত বন্দরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার খেলা শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। সে কারণেই পঞ্চায়েতের বাইরের এলাকা থেকে প্রভাবশালী তথা বাহুবলীদের আনাগোনা চলেছে একাধিক পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে। নেপথ্যে থেকে ছড়ি ঘুরিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের একাংশ ঠারেঠোরে তা মানলেও প্রকাশ্যে চুপ।
বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া, গুপ্তিপাড়া-১, ২ চরকৃষ্ণবাটি, সোমরা-২, জিরাট, ডুমুরদহ-১ এবং একতারপুর— এই ৮টি পঞ্চায়েতেই প্রধান বা উপপ্রধান পদে ভোটাভুটি হয়েছে। দল অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি। ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের বিরুদ্ধে গিয়ে যাঁরা ভোটাভুটি করে প্রধান-উপপ্রধান পরিবর্তন করেছেন, তা দলকে জানাব। যা ব্যবস্থা নেওয়ার দলই নেবে।’’ তবে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে দলেরই একাংশের মধ্যে।
বলাগড়ে গঙ্গায় প্রস্তাবিত মিনি বন্দরে বহু টাকা খরচ হবে। তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, ওই জায়গার রাশ হাতে রাখার রেষারেষি শুরু হয়েছে। দলের এক নেতাকে গুলি করে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত এক প্রভাবশালীও সেই চেষ্টায় সামিল হয়েছেন। কয়েক বছর আগেও বাঁশবেড়িয়া পুর-এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ অন্য এক নেতাওএখানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। তৃণমূলের স্থানীয় কেষ্টবিষ্টুদের পাশে তিনিও হাজির।
এলাকার তৃণমূল নেতাদের অনেকের বক্তব্য, বন্দরের কাজে ইমারতি দ্রব্য থেকে শ্রমিক সরবরাহ, গাড়ি খাটানোর উপায়, দোকানপাট বা হোটেল ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রভাবশালী লোকজন বা দলের একাংশ এই সবেতেই মাথা গলাতে চান। সে জন্যই পঞ্চায়েতে নিজেদের লোক বসাতে তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। দলের একাংশের দুর্নীতি নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনি অবশ্য কম প্রতিবাদ জানাননি। কয়েক মাস আগে চাকরি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে নবীনের বিরুদ্ধে। তাঁকে পদ থেকে সরানোর দাবিতে দলে দরবার করেন বিধায়ক। নবীনের সঙ্গে চলবেন না বলেও জানান। দল অবশ্য নবীনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
উপরন্তু, শ্রীপুর-বলাগড়ের পঞ্চায়েতের প্রধান পদে বসেছেন তিনি। প্রস্তাবিত বন্দর হচ্ছে এই পঞ্চায়েত এলাকাতেই। ঘটনাচক্রে এখানে আগের বার প্রধান ছিলেন অধুনা বহিষ্কৃত প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়া। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে ধৃত শান্তনু এখন হাজতে।
বিজেপির রাজ্য নেতা স্বপন পালের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের লোকজনের যা নৈতিক চরিত্র, তারা সেই মতোই কাজ করছে। নিজের দলের লোকজনকে ঠেকাতেও বাহুবলীদের নামিয়েছে।’’ বিজেপির বলাগড়ের আহ্বায়ক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আদিসপ্তগ্রাম, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী থেকে লোক এনে তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠী আধিপত্য ফলাতে চাইছে বন্দরে ক্ষমতা কায়েমের লক্ষ্যে।’’
সিপিএমের বলাগড়-১ এরিয়া কমিটির সদস্য বিষ্ণু প্রামাণিকেরও বক্তব্য, ‘‘বন্দর না-হতেই তার দখল করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক দলের লোকজনের মধ্যে। সেই লড়াইতেই বহিরাগতেরা সামিল তাঁদের ব্যবসার জন্য।’’
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘চর্চা, আলোচনা চলতেই পারে। মানুষ তৃণমূলকে পঞ্চায়েত চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে। তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে। এর বাইরে কার মধ্যে কী আছে, সেটা আলোচনার বিষয় নয়। আইনবিরুদ্ধ কিছু কাজ হলে প্রশাসন আছে, বিচারব্যবস্থা আছে। তথ্যপ্রমাণ-সহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হলে সেই প্রক্রিয়ায় নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy