সিঁড়ির নীচে সেই রান্নাঘর।
ফের গ্যাস সিলিন্ডার ‘লিক’ করে দুর্ঘটনা হাওড়ার শ্যামপুরে। এ বার অগ্নিদগ্ধ হলেন এক দম্পতি-সহতিন জন।
গত বুধবার দুপুরে শ্যামপুরের আড়গোড়িয়া গ্রামে গ্যাস ‘লিক’ করে অগ্নিকাণ্ডে জখম হন দুই শিশু-সহ ১১ জন। রবিবার রাত ৯টা নাগাদ একই রকম দুর্ঘটনায় জখম হলেন বেনিয়া গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ কুইল্যা, তাঁর স্ত্রী পুতুল এবং গ্যাস ওভেন সারাতে আসা তরুণ বর নামে এক যুবক। তাঁদের প্রথমে স্থানীয় ঝুমঝুমি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। দুর্ঘটনার পরেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করা হয়। শীঘ্রই গ্রামে সচেতনতা শিবির করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে এসে ওভেনের সঙ্গে সংযোগ করে দিয়ে যান ডেলিভারি-ম্যান। লক্ষ্মণের পুত্রবধূ তনুশ্রী জানান, সে দিন সিলিন্ডার লাগানোর পরে ওভেনের বার্নার ভাল ভাবে জ্বলছিল না। গ্যাসের গন্ধও বেরোচ্ছিল। ডেলিভারি-ম্যান ‘সার্ভিসিং’-এর পরামর্শ দেন। তিনি পরে এসে করে দিয়ে যাবেন বলেও আশ্বাস দেন। তারপরে দু’দিন কেটে গেলেও তিনি আসেননি।
তনুশ্রী আরও জানান, রবিবার রাতে একেবারেই বার্নারে আগুন না-জ্বলায় স্থানীয় মিস্ত্রি তরুণকে ডাকা হয়। তিনি এসে সব কিছু দেখে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে সিলিন্ডারের মুখ নাড়াচাড়া করেন। তখনই গ্যাস বেরোচ্ছিল। এরপরে ওভেন জ্বালানোর চেষ্টা করতেই অগ্নিকাণ্ড। পাশেই ছিলেন লক্ষ্মণ ও তাঁর স্ত্রী। তিন জনেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। জামাকাপড়ের আগুন নিভিয়ে জল দিয়ে রান্নাঘরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। জ্বলন্ত সিলিন্ডারটি কোনও রকমে তরুণ বের করে পুকুরে ফেলে দেন।
লক্ষ্মণের একতলা পাকা বাড়ি। সিঁড়ির নীচে ছোট্ট একটি রান্নাঘর। সেখানে কোনও জানালা নেই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পরে দমকলকর্মীরা যান। ততক্ষণে আগুন নিভে গিয়েছে।
গত বুধবার আড়গোড়িয়া গ্রামের অশোক মণ্ডলের বাড়িতে ডেলিভারি-ম্যান সিলিন্ডার সরবরাহ করলে দেখা যায়, গ্যাস বেরোচ্ছে। সিলিন্ডারটি তিনি বাড়ির পাশে রেখে মিস্ত্রি ডাকতে যান। বাড়ির এক জায়গায় কাঠের আগুনে রান্না করছিলেন পরিবারের মহিলারা। গ্যাস বেরিয়ে আগুন লাগে। তাতেই ১১ জন জখম হন। বর্তমানে তাঁরা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
পরপর দু’টি দুর্ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সোমবার তড়িঘড়ি শ্যামপুর থানায় গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা, ডিস্ট্রিবিউটর, জনপ্রতিনিধি এবং বেশ কিছু সাধারণ মানুষকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় প্রশাসনের উদ্যোগে।
মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) শমীককুমার ঘোষ বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব ডেলিভারি-ম্যানকে কয়েকদিনের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি সচেতনতা-প্রচার করা হবে। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাদের নিয়ে প্রতিটা পঞ্চায়েতে সচেতনতা শিবির করা হবে। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে, কী করণীয়, তা জানিয়ে স্টিকার করতে। যেটি গ্রাহক রান্নাঘরে লাগিয়ে রাখতে পারবেন।’’
শ্যামপুরে যে ডিস্ট্রিবিউটরের পক্ষ থেকে এ দিন গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল, তাদের পক্ষে তাপস দাস বলেন, ‘‘যখন গ্রাহক গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন বা ওভেন ভাল ভাবে জ্বলছিল না, তখন তাঁরা ডিস্ট্রিবিউটরকে খবর দিতে পারতেন। ডিস্ট্রিবিউটরের লোক গিয়ে মেরামত করে দিতেন। সেটা না করে স্থানীয় মিস্ত্রিকে ডেকে ওই কাজটি করতে গিয়েছিলেন ওঁরা। ঠিকঠাক পদ্ধতিতে হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা। শীঘ্রই আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাব। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy