চলতি অর্থবর্ষ (২০২৪-’২৫) শেষ হতে চলল। নিজস্ব আয় সে ভাবে বাড়েনি হাওড়া জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতের। ফলে, আগামী অর্থবর্ষে পঞ্চম রাজ্য অর্থ কমিশনের নিঃশর্ত (আনটায়েড) তহবিলের টাকা মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ওই সব পঞ্চায়েতের কর্তারা। কারণ, ওই তহবিল পাওয়ার প্রধান শর্ত, পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় আগের অর্থবর্ষের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বাড়াতে হবে।
জেলার একাধিক পঞ্চায়েতের কর্তাদের দাবি, আগে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার অধিকার তাদের হাতে ছিল। ফলে, ব্যবসায়ীদের আবেদন (দোকান বা কারখানা, তার মাপ, পণ্য ইত্যাদি) মোতাবেক ফি ধার্য করা হত। তাতে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল বাড়ত। প্রতি বছর লাইসেন্স পুনর্নবীকণের জন্যেও ফি জমা নেওয়া হত। পঞ্চায়েতের আয়ের প্রধান সূত্র ছিল ট্রেড লাইসেন্স। কিন্তু দু’বছর ধরে অনলাইনে সরাসরি ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। এতে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বিশেষ লাভ হচ্ছে না।
রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে বহু টাকা আদায় করতেন পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের একাংশ, এমন অবিযোগ মিলছিল। সেই টাকার পুরোটা আবার পঞ্চায়েতে জমাও পড়ত না। অভিযোগ পেয়েই অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া চালু হয়েছে। শুধু হাওড়া জেলায় নয়, রাজ্যের সর্বত্র এই ব্যবস্থা
চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন,
‘‘ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও আয়ের আরও অনেক সূত্র আছে। আয়
বৃদ্ধির নতুন পথ সন্ধান করার
কথা বলা হয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে। সেই সব পন্থা অনুসরণ করলে পঞ্চায়েতের আয় না বাড়ার কোনও কারণ নেই।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একক-একটি পঞ্চায়েত গড়ে
বছরে রাজ্য অর্থ কমিশন থেকে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা পেয়ে থাকে। তার মধ্যে অর্ধেক নিশঃর্ত তহবিলের টাকা। আয় বাড়াতে না পারার
জন্য যদি জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে নিঃশর্ত তহবিলের
বিপুল টাকা না আসে, তা হলে উন্নয়নের কাজ অনেকটাই ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ।
জেলার একাধিক পঞ্চায়েতের কর্তাদের বক্তব্য, ট্রেড লাইসেন্সের নয়া ব্যবস্থায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো তাদের দোকানের আয়তন কম দেখিয়ে ন্যূনতম ৫০ টাকা করে মোট ১৫০ টাকা দিয়ে তিন বছরের লাইসেন্স করে
নিচ্ছে। অথচ, দোকান বা কারখানার আয়তন বিশেষে সর্বোচ্চ ফি ধার্য রয়েছে ৫০০ টাকা।
বাগনান ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই পঞ্চায়েতের নির্দিষ্ট ‘কোড’ ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের পক্ষে সরেজমিনে গিয়ে দোকান বা ব্যবসায়িীক প্রতিষ্ঠানের আয়তন দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
ওই পঞ্চায়েতে গত আর্থিক বছরে নিজস্ব আয় ছিল ন’লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে চললেও আয় হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। গত বারের থেকে ৫ শতাংশ আয় বৃদ্ধি করা তো দূর, ঘাটতি হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তাদের আশঙ্কা, আগামী আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ করা পঞ্চম রাজ্য অর্থ কমিশনের নিঃশর্ত তহবিলের টাকা হয়তো মিলবে না।
একই পরিস্থিতি জেলার ১৫৭টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশেরই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)