খানাকুলে রাজা রামমোহন রায়ের বসতবাটী। নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যাশা পূরণ হল না।
রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান খানাকুলের রাধানগরকে কেন্দ্র করে সরকারি বঞ্চনার অভিযোগ থেকেই গেল আরামবাগ মহকুমার মানুষের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার বিকালে আরামবাগে সভা করতে এসে একাধিকবার রামমোহনের নাম উচ্চারণ এবং তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও তাঁর জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে কোনও উন্নয়নের কথা বলেননি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেন, ‘‘এখানকার খানাকুল রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান। তিনি নারীমুক্তির জাগরণ ঘটিয়েছিলেন।’’ এরপরেই মোদী চলে যান সন্দেশখালি প্রসঙ্গে। তাতেও রামমোহনের কথা ঘুরে-ফিরে এসেছে তাঁর মুখে।
‘রাধানগর রামমোহন মেমোরিয়াল অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজ়েশন’-এর সম্পাদক দেবাশিস শেঠের খেদ, ‘‘আশা করেছিলাম, রামমোহনের জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময়ে আমাদের এবং অন্যান্য সংগঠনের যে দাবি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে তিনি তাঁর ভাবনা বা সিদ্ধান্তের কথা কিছু বলবেন। কিন্তু রাধানগর পর্যন্ত রেলপথ-সহ সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কোনও আলোকপাত করলেন না।’’ ‘ভারতের প্রথম রেলযাত্রী’ রামমোহনের জন্মস্থানে রেল সংযোগের দাবি না মেটায় একই ভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছেন আরামবাগ সাহিত্য ও শিল্প পরিষদের সম্পাদক বিভাংশু দত্ত, আরামবাগ নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক শৈলেন সরকারের মতো অনেকেই।
দেবাশিস জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও প্রত্যাশা ছিল, তিনি আরামবাগ থেকে বর্ধমান পর্যন্ত রেলপথের ঘোষণা করবেন, নদীঘেরা আরামবাগ মহকুমায়, বিশেষত, খানাকুলের বন্দরে রূপনারায়ণ নদ ও নতিবপুরে মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপরে সেতুর কথা বলবেন। সে সব নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কিছু শোনা যায়নি। ফলে, এখান থেকে দেশ এবং রাজ্যের কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস করলেও আরামবাগ মহকুমার প্রাপ্তির ঝুলি কার্যত শূন্য।
খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমার তরফে আবেদন করা আছে। লোকসভা ভোটের পর নিশ্চিত ব্যবস্থা নেবেন।’’
তবে, রাজ্য সরকারের ‘উদাসীনতা’ নিয়েও ক্ষুব্ধ রামমোহনের স্মৃতিরক্ষার দাবিতে গড়া ওঠা বিভিন্ন কমিটি এবং রামমোহনপ্রেমীরা। তাঁদের ক্ষোভ, রাধানগর, রঘুনাথপুর ও নাঙ্গুলপাড়ায় রামমোহনের পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় ১৪ একর জমি ১৯৬০ সালে সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ করা হলেও সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা হয়নি। রামমোহনের জন্মভিটে রাধানগর এবং কাছেই রঘুনাথপুরে তাঁর বাসস্থানকে ঘিরে রাজ্য সরকার ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু খানতিনেক পুকুরের পানা পরিষ্কার ছাড়া এখনও পর্যন্ত ওই সম্পদ সংরক্ষণে আর বিশেষ কিছু করা হয়নি। সৌন্দর্যায়ন দূর, শিশুদের দোলনা-সহ খেলার নানা সরঞ্জাম ভাঙা। অতীতে পর্যটকদের জন্য নৌকাবিহারের ব্যবস্থা ছিল। এখন বন্ধ। রামমোহনের নিজের হাতে লাগানো আমবাগানকে ঘিরে প্রাচীন পরিখা মজে গিয়ে যেমন ঝোপজঙ্গল হয়েছিল, তেমনই রয়ে গিয়েছে।
রামমোহনের জন্মস্থানের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে হুগলি দায়িত্বে জেলা পরিষদ। সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়ার বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আছে বিষয়টি। তিনি ইতিমধ্যে শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত দেবানন্দপুরের উন্নয়নে ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। রাধানগরের উন্নয়নেও হাত দেবেন।’’ জেলা পরিষদ সূত্রের দাবি, ২০১৪ সাল নাগাদ রাজ্য সরকারের দেওয়া ৫০ লক্ষ টাকায় ৩৩ বিঘা এলাকার আমবাগানের প্রাচীর হয়েছে। তারও আগে একটি অতিথিশালা তৈরি করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy