উনুনে রান্না করছেন মালপাড়া গ্রামের সুনীল বাউল দাস। নিজস্ব চিত্র
কাঠবোঝাই বস্তা মাথায় হাঁটছিলেন মহিলা। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, এ তাঁর রোজনামচা। কাঠকুঠো জ্বেলে হাঁড়ি চড়ে। সরকারি প্রকল্পে পাওয়া ওভেন গুটিয়ে রাখা। কেননা, গ্যাস কেনার সামর্থ্য নেই।
হুগলির বলাগড় ব্লকের ডুমুরদ-নিত্যানন্দপুর ২ পঞ্চায়েতের খালকাটি গ্রামের ওই মহিলার নাম মামনি বাউল দাস। মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় এ তল্লাটে তাঁর মতো অনেকেরই এমন জেরবার অবস্থা। গরিব মানুষের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকার মহিলাদের জন্য ‘উজ্জ্বলা যোজনা’য় রান্নার গ্যাস দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৬ সালে উত্তরপ্রদেশের মাহোবা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই যোজনায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের মহিলাদের বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়।
কিন্তু, গ্যাসের দামবৃদ্ধির চোটে অনেক পরিবারই ওভেন তুলে রেখেছে। খালকাটি, মালপাড়া, নতুনপাড়া, ঝিলপাড়া, আমতলা গ্রামে প্রায় দেড়শো পরিবার মাটির উনুনেই ফিরেছেন। কাঠকুঠোয় চলছে রান্না। তাঁরা জানান, একটি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ১১১০ টাকা দিয়ে। দু’শো টাকা ভর্তুকি মেলে। ’১৬ সালে দাম ছিল কার্যত অর্ধেক। ২০১৭ সালে শ’দুয়েক টাকা বাড়ে। ক্রমে আরও বেড়ে এই জায়গায় পৌঁছেছে। গত মার্চ মাসে দাম ছিল হাজারের কম। অনেকেই বলছেন, প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবেই এই প্রকল্প। ফলে, ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। ঝেড়ো মালপাড়ার অনেক পরিবার বছরে একটি বা দু’টি গ্যা স সিলিন্ডার কেনেন। বাকি সময় মাটির উনুনই ভরসা।
এক সময় রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধি নিয়ে জোর আন্দোলন করেছিলেন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি। এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি সম্প্রতি দলীয় কর্মসূচিতে হুগলিতে এসেছিলেন। গ্যাসের দামবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। জবাবে, কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া-সহ নানা ফিরিস্তি শুনিয়ে দেন তিনি।
গরিবগুর্বো পরিবার প্রশ্ন তুলছে, তা হলে এই প্রকল্প চালুর দরকারকী ছিল!
বছর দশেক আগে মামনির স্বামী সুনীল বাউল দাসের দৃষ্টি চলে যায়। কাজ করতে পারেন না। মামনি খেতমজুরি করেন। রোজ কাজ মেলে না। মাসে রোজগার হাজার চারেক টাকা। গ্যাসে রান্নার কথা ভাবতেও পারেন না মামনি। মালপাড়া গ্রামের বিদ্যু্ৎ বাউল দাস টিউবওয়েল সারাইয়ের মিস্ত্রি। তাঁর দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা। তাও, অধিকাংশ দিন কাজ থাকে না। কোনও কোনও দিন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ জুটে যায়। সব মিলিয়ে মাসিক আয় মেরেকেটে ৪-সাড়ে ৪ হাজার। ঠেকনা দিতে স্ত্রী ঝুমা ধানের মরসুমে খেতমজুরি করেন। তাঁদেরও বাড়িতে ওভেন গুটিয়ে রাখা। গ্যাসের কথায় বিদ্যুৎ হাসেন, ‘‘আমাদের সংসার যে ভাবে চলে, তাতে গ্যাস কেনা স্বপ্ন। একটা গ্যাস হাজার টাকার বেশি। রোজগারের সিকি ভাগ। কাঠকুঠোই ভাল।’’ মামনির মতোই জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনা ঝুমারও ‘ডিউটি’।
প্রৌঢ় সুজন বাউল দাসও খেতমজুর। রান্নার গ্যাস নিয়ে প্রশ্ন শুনে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘‘মাসে হাজার তিনেক টাকা আয় করি। রান্নার জন্য গ্যাস কিনতে হলে খাব কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy