বৈদ্যবাটী খাল সংস্কারের কাজ চলছে পিয়ারাপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
বেশ কয়েক দশক পরে হুগলি শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ডানকুনি-বৈদ্যবাটী খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। খরচ হচ্ছে সাত কোটি টাকা। কাজ শেষের সময়সীমা ধার্য হয়েছে আগামী মার্চ মাস। তবে, গোবর এবং জবরদখলের সমস্যা না মিটলে সংস্কারে লাভ কতটুকু হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, এখনই বৈদ্যবাটীর জবরদখল সরানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। যে অবস্থায় রয়েছে, সে ভাবেই খালটি সংস্কার করা হচ্ছে। ডানকুনিতে খাল থেকে গোবর তুলতে আগে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা কার্যকর হয়নি। এর জন্য অন্য ব্যবস্থা দরকার।
২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল বৈদ্যবাটীতে গঙ্গা থেকে বেরিয়ে ডানকুনি হয়ে বালিখালে ফের গঙ্গায় মিশেছে। বৈদ্যবাটী থেকে মিল্কি বাদামতলা পর্যন্ত এটি ‘বৈদ্যবাটী খাল’ নামে পরিচিত। তার পরে হয়েছে ‘ডানকুনি খাল’। প্রবীণেরা জানান, একসময় স্বচ্ছ জলে মাছ ধরা চলত। খেতে খালের জল দেওয়া হত। নৌকা চলত। পরে কল-কারখানা থেকে ঘরবাড়ির বর্জ্য ফেলার জায়গা হয় খাল। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয় ডানকুনিতে খাটালের গোবর। পরিস্থিতি এমন, গোবর জমে ডানকুনির অংশে খালের নাম লোকমুখে ‘গোবর নদী’।
খালটি সংস্কার এবং গোবরের দূষণ রোধের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই তুলছেন পরিবেশকর্মী থেকে এলাকাবাসী। তারকেশ্বরের পরিবেশ সংস্থা ‘গ্রিন মেটস’ জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করে। আন্দোলনের জেরে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। গোবরের সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা করা হয়। সম্প্রতি জেলাশাসক আদালতে হলফনামায় গোবর সমস্যার কথা মেনে নিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কথা জানান। তবে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মনে করছে, ওই কাজে অন্য প্রযুক্তি দরকার। ওই গোবর প্রাকৃতিক সম্পদে পরিণত করা নিয়ে ফের জেলাশাসককে হলফনামা দিতে বলেছে আদালত।
সমস্যা রয়েছে বৈদ্যবাটীতেও। অভিযোগ, এখানে দিল্লি রোডের পূর্ব দিক থেকে গঙ্গা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে খাল লাগোয়া সরকারি জমি দখল হয়ে গিয়েছে। জবরদখলমুক্ত না হলে খালের জল গঙ্গায় নামতে পারবে না। সংস্কারের কোটি কোটি জলে যাবে। অভিযোগ, জমি-কারবারিদের সঙ্গে প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশে সরকারি জমি বেহাত হয়েছে।
পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুদর্শন বরের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতিতে বৈদ্যবাটী শহরে সরকারি জমি দখল করে বেআইনি ভাবে পরচা বানিয়ে বেচেছে জমি-কারবারিরা। খালের গা ঘেঁষে সরকারি জমিতে বহুতল, গ্যারাজ, বাড়ি, এমনকি, বেসরকারি কলেজও হয়েছে। জমি দখলমুক্ত করা না হলে খাল সংস্কার করে লাভ হবে না।’’
বৈদ্যবাটীর পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘জমি দখলের সমস্যা আজকের নয়। দীর্ঘদিনের। ভূমি দফতর দখলকারীদের নামে জমির পরচা তৈরি করে দিয়েছে। সম্প্রতি একটি সভায় জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বন্দনা পোখরিয়াল জানান, নথি না দেখে এ ব্যাপারে মন্তব্য করবেন না।
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছরের পর বছর ডানকুনিতে খাটালের ব্যবসা করছেন কিছু মানুষ। গোবরের প্লান্ট কেন তাঁদের দিয়ে করানো গেল না, আশ্চর্যের। ওঁদের থেকে দূষণমূল্য আদায় করা দরকার।’’
এই খালের দুর্দশায় বৈদ্যবাটী ও ডানকুনি পুরসভা এবং আশপাশের ৭টি পঞ্চায়েতের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দি হয়। সেই সমস্যা সমাধানে খাল সংস্কার জরুরি হয়ে পড়ে। জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক গৌতম অধিকারী বলেন, ‘‘রেলসেতুর কাজের জন্য বৈদ্যবাটীতে কাজ পরে করা হবে। যেখানে মাটি রাখার জায়গা নেই, সেখানকার মাটি খাস জমিতে রাখা হবে। পরে পূর্ত দফতর তা সরকারি কাজে মাহেশ জগন্নাথ মন্দির, প্রস্তাবিত সিল্ক হাব এবং চণ্ডীতলা-২ ব্লকের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy