কৃষি আইন বাতিল ঘোষণার পর সিঙ্গুরের কৃষকদের উল্লাস। ছবি: দীপঙ্কর দে।
তেরো-চোদ্দো বছর আগে তাঁরা নিজেরাই ছিলেন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে। জমি রক্ষার লড়াইয়ে নেমে এ রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিলেন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’রা। শুক্রবার তাঁরা দেখলেন, কৃষক আন্দোলনের জেরে কেন্দ্রীয় সরকারের পিছু হটা।
তাই ‘অনিচ্ছুক’দের অনেকেই এ দিন বললেন, ‘‘অন্যায়ের প্রতিবাদ সঠিক ভাবে হলে শাসককে কিন্তু পিছু হটতেই হয়।’’
দুধকুমার ধাড়ার কথাই ধরা যাক। সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলনের সময়ে দুধকুমার ছিলেন অন্যতম প্রতিবাদী মুখ। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সেই সরে এল। কিন্তু অনেক দেরিতে। এর মাঝে বেশ কিছু প্রাণ অকালেই চলে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহারের লড়াইয়ে। অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া জরুরি। তা জোরের সঙ্গে হলে শাসককে পিছু হটতেই হয়।’’
কেন্দ্রীয় সরকার তিন কৃষি আইন বাতিল করায় এ দিন আবির খেলে আনন্দ উদ্যাপন করেন সিঙ্গুরের অনেক চাষি। উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছে অনেক জায়গাতেই। তবে, চাষিদের অনেকেই মনে করছেন, সামনে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ কয়েকটি রাজ্য বিধানসভা ভোট থাকায় কৌশলগত ভাবেই কেন্দ্রের এই সরে আসা। একইসঙ্গে অবশ্য তাঁরা আন্দোলনের জোরের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
সিঙ্গুর আন্দোলনের আর এক মুখ ছিলেন বর্তমান বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তিনি বলেন, ‘‘অহঙ্কারের পতন হল। আমরাও সিঙ্গুরে ২০০৬ সালে বাম সরকারের অহঙ্কার দেখে ছিলাম। এ বারেও মাথা নিচু করে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল স্বীকার করতে হয়েছে। তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই। সংসদে ওই আইন আগে প্রত্যাহার করুক কেন্দ্র।’’ প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘দেশের৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত চাষিদের জন্য এমন আইন এ বার প্রণয়ন করা, যা তাঁদের হিতের জন্য হয়। তাতে মানুষের মঙ্গল হবে।’’
কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন দিল্লি থেকে আন্দোলনকারীরা একবার সিঙ্গুরে এসেছিলেন। এখানকার অনেক চাষিই আন্দোলনকারীদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ দিনের সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি। তাঁদের মধ্যে প্রশান্ত বাগ বলেন, ‘‘নয়া কৃষি আইনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্র ভারতের কৃষকের ভাগ্য শিল্পপতিদের হাতে সঁপে দিয়েছিল। কৃষকেরা নয়, তাঁদের ফসলের দাম নির্ধারণের অধিকার তুলে দেওয়া হয়েছিল দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি, কেন্দ্র ওই কালা আইন প্রত্যাহার করায়। নিজেদের ফসলের দাম নিজেরাই ঠিক করার অধিকার ফিরে পেলেন চাষিরা।’’
ঠিক যে ভাবে ২০১৬-তে সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর আনন্দে মেতেছিলেন চাষিরা, এ দিন যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল এ তল্লাটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy