‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে সামগ্রী বিলি গোঘাটের আনুড়ে। ফাইল চিত্র।
ঘরে ঘরে বা পাড়ায় গিয়ে রেশন সামগ্রী দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগ প্রথম থেকেই জানাচ্ছিলেন ডিলাররা। ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প করতে গিয়ে হয়রানি এবং খরচের তুলনায় কমিশন বাড়ানো হয়নি বলেও ক্ষোভ ছিল। এ বার ডিলারশিপ ছাড়ার আবেদনপত্র জমা পড়ল হুগলিতে।
গত বুধবার আরামরাগের আরান্ডি-২ পঞ্চায়েত এলাকার পুরার ডিলার নীলমণি দাস মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রকল্প নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। চিঠিতে লিখে দিয়েছি, আমার পক্ষে পাড়ায় গিয়ে মাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু, সরকারি নির্দেশিকা মানতে পারছি না তাই ডিলারশিপ ছেড়ে দিতে চাইছি।” আবেদন এখনও অনুমোদন হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রায় ৭-৮টি গ্রাম নিয়ে আমার প্রায় ৭ হাজারের কাছাকাছি উপভোক্তা। আগে দোকানে বসে জিনিস দিতে অসুবিধা হত না। এখন পদ্ধতি বদল হওয়ায় আমি যথাযথ পরিষেবা দিতে পারছি না।”
আবার পুরশুড়ার ঘোলদিগরুইয়ের ন্যাওটার রেশন ডিলার রঞ্জিতা বেরাও নিজের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আপাতত অব্যাহতি নিয়েছেন। তাঁর রেশন দোকানটি চালান ছেলে চিন্ময়। তাঁর দাবি, “ডিলারশিপ আপাতত ছাড়া হয়নি। মায়ের ডাক্তারি শংসাপত্র নিয়ে কিছু দিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
এ দিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের পাশেই শ্যামপুর গ্রামের আর এক ডিলারের আওতায় দেওয়া হয়েছে। লালচাঁদ সামন্ত নামে সেই ডিলার আবার শুক্রবার ওই বাড়তি এলাকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে মহকুমা খাদ্য নিয়ামককের কাছে চিঠি দিয়েছেন। লালচাঁদ বলেন, “আমার নিজের ৫,৮৫০ জন গ্রাহক নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। প্রতিদিন অশান্তি হচ্ছে। তার উপর ন্যাওটার ২৭০০ উপভোক্তার দায়িত্ব আর নিতে পারছি না।’’ তিনি জানান, আর্থিক লোকসান ছাড়াও কাজের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। কোনও উপভোক্তার কার্ড লাল হয়ে গেলেও জোর করে মাল আদায় করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।
হুগলি জেলায় পুরোদমে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প শুরু হয় ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে। কমিশন কুইন্ট্যাল প্রতি ৭৫ টাকা থেকে ১৫০ বাড়লেও ডিলারদের দাবি ছিল ৪০০ টাকার। ডিলারদের অভিযোগ ছিল, প্রতি গ্রাহকের ঘরে বা পাড়ায় গিয়ে রেশন দেওয়া পরিকাঠামো নেই। মাথায় করে মাল বয়ে নিয়ে যাওয়া-আসার ( কোনও গ্রাহক না থাকলে জিনিস ফেরত আনতে হবে) ঝামেলা আছে। নেটওয়ার্কের অভাবে আঙুলের ছাপ নিয়ে মাল দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ই-পস মেশিন (ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অফ সেলিং) কাজ করে না অনেক এলাকায়। এই গ্রীষ্মে শ্রমিক মিলছে না। মিললেও ৩০০ টাকার বদলে তাঁরা ৬০০ টাকা মজুরি চাইছেন বলে দাবি ডিলার সংগঠনের। রাজ্য ডিলার সংগঠনের ক্যাশিয়ার তথা পুরশুড়ার ব্লক সম্পাদক শক্তিপদ দে-র ক্ষোভ, “অনেক ঝক্কি পোয়াতে হচ্ছে ডিলারদের। যাঁরা পেরে উঠছেন না, তাঁরা ছেড়ে দিতে চাইছেন। জিনিস বিলি নিয়ে নিত্য অশান্তি। তার উপর একটু উনিশ-বিশ হলেই শো-কজ় আর জরিমানা করা হচ্ছে।’’
জেলার রেশন ডিলার সংগঠনের সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, “প্রকল্প সুষ্ঠু ভাবে চালাতে অনেক অসুবিধা আছে। তবু ডিলারশিপ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা আটকাতে আমরা নিজেরা আলোচনায় বসছি। তার মধ্যেই জেলার আরামবাগের পুরা থেকে একটি ডিলাশিপ ছাড়ার আবেদন পড়ে গেল। তাঁকে বোঝানো হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক ঘাটতিগুলো জেলা খাদ্য দফতরের নজরে আনা হচ্ছে।”
মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ মাইতি বলেন, “একজন একেবারেই ডিলারশিপ ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছি আমরা। সরকারি প্রকল্পটি চলবে, তিনি একান্ত রাজি না হলে তখন বিকল্প ভাবা হবে। বাকি একজন অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন। সেখানের উপভোক্তাদের যে রেশন দোকানে অস্থায়ী ভাবে ট্যাগ করা হয়েছিল, তিনি বাড়তি আংশ সামলাতে পারছেন না বলে আবেদন করেছেন। সেটা আমরা বিবেচনা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy