মাহেশের রথযাত্রায় ভক্তের ঢল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর পরে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী রথে চেপে জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি গেলেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। করোনা পরিস্থিতিতে দু’বছর রথটান হয়নি। এ বার চিরাচরিত প্রথায় উৎসব হলেও করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রশাসনের আধিকারিকরা। কিন্তু সে পরামর্শ হেলায় উড়ল মাহেশে। ভিড়ে নজরে এল হাতেগোনা মাস্ক।
মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে কেউ বললেন, মাস্ক পরে ভিড়ে বেশিক্ষণ থাকা মুশকিল। কারও ব্যাখ্যা, করোনা শক্তি হারিয়েছে। তাই কোনও চিন্তা নেই। কেউ আবার পকেট থেকে মাস্ক বের করে দেখিয়ে দিলেন,সঙ্গে রয়েছে।
উৎসবের আবহে ভক্তদের এ ভাবে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করার ঘটনায় চিকিৎসকদের একাংশ প্রমাদ গুনছেন। তাঁদের আশঙ্কা, অসচেতনতা করোনা সংক্রমণ আরও অনেক বেশি ছড়িয়ে দিতে পারে। চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাসের কথায়, ‘‘আমাদের চেম্বারে করোনা রোগী আসা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকায় সবাই পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। প্রত্যেকের পরীক্ষা হলে এই সংক্রমিতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কথা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন করোনায় জটিলতা হয়তো খুব বেশি হচ্ছে না। কিন্তু সেরে ওঠার পরে নানা জটিলতা হচ্ছে। এটা সকলের মাথায় রাখা উচিত। উৎসবে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’’
এ দিন দুপুর থেকে মাহেশে ভিড় বাড়তে শুরু করে। পুলিশের হিসেব, পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ এসেছিলেন রথটান দেখতে। রথটান শুরু হয় বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ। মাসির বাড়ি পৌঁছতে সন্ধ্যা প্রায় ৭টা বেজে যায়। বৃষ্টিবিহীন দিনে নির্বিঘ্নেই মাসির বাড়ির (জগন্নাথের সখী পৌর্ণমসির বাড়ি। পৌর্ণমসি থেকেই ‘মাসি’ কথাটি এসেছে) মন্দিরে পৌঁছে যান তিন দেবতা। আগামী ৯ জুলাই উল্টোরথ। ওই দিন রথে চেপেই তাঁরা জগন্নাথ মন্দিরে ফিরবেন।
সুষ্ঠু ভাবে উৎসব পালন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়া পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল। সকাল থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মাহেশ এলাকায়জিটি রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করেন। তিনি জানান, মোট ৮০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। ছিল ড্রোনের নজরদারি। দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে স্বাস্থ্যশিবির—সব ব্যবস্থাই ছিল।
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি থেকে মাহেশে রথ দেখতে এসেছিলেন পঙ্কজ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘পুরীর রথযাত্রা দেখেছি। গুপ্তিপাড়াতেও দেখেছি। মাহেশে প্রথম বার এলাম। এত নামডাক এখানকার রথের! গত দু’বছর আসব ভেবেছিলাম। করোনার জন্য রথটান না হওয়ায় আসিনি। এ ভার করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। তাই চলে এলাম।’’
জিটি রোডের দু’ধারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান জলসত্র শিবির করে। অন্যান্য বছর প্লাস্টিকের গ্লাসে রাস্তা ছয়লাপ হয়ে থাকে। এ বার এ ক্ষেত্রে সচেতনতার পরিচয় মিলেছে। অধিকাংশ জলসত্র শিবিরেই প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের গ্লাসে জল দেওয়া হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, কাঞ্চন মল্লিক, নির্মল মাঝি প্রমুখ রথটান দেখতে এসেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy