Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Police Personnel Death in Accidents

দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মীদের মৃত্যুতে প্রশ্ন

বুধবার রাতে বাগনান থানা এলাকায় মুম্বই রোডে যে দুর্ঘটনায় এক জন সাব-ইন্সপেক্টর, এক হোমগার্ডের মৃত্যু হয়েছে, সেই গাড়িটিও ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।

দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি ও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছে পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা।

দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি ও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছে পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
Share: Save:

গত কয়েক বছরে মুম্বই রোডে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ারের। কেন বার বার এই ঘটনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। বেপরোয়া যান চলাচলের অভিযোগ উঠছে এই প্রসঙ্গে। পুলিশের গাড়িগুলির বেহাল, সে কথাও শোনা যাচ্ছে। আবার মুম্বই রোডে পুলিশের গতিবিধি নিয়ে বাঁকা প্রশ্নও তুলছেন স্থানীয় অনেকে।

গ্রামীণ হাওড়ায় থানাগুলিতে সর্বত্রই পুলিশকর্মীদের যাতায়াতের গাড়িগুলি বেহাল বলে জানাচ্ছেন দফতরেরই অনেকে। বেশির ভাগ গাড়ির টায়ার ‘রিসোল’ করা। জানলার কাচ ওঠালে নামানো যায় না। দরজা বন্ধ করা হলে খুলতে চায় না। আবার কোনও গাড়ির দরজা বন্ধ করা যায় না, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়!

বুধবার রাতে বাগনান থানা এলাকায় মুম্বই রোডে যে দুর্ঘটনায় এক জন সাব-ইন্সপেক্টর, এক হোমগার্ডের মৃত্যু হয়েছে, সেই গাড়িটিও ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। গাড়িটি সামনের দিকে গার্ড ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। এয়ারব্যাগ থাকার প্রশ্নই নেই। দুর্ঘটনার পরে গাড়ির ডান দিকের দরজা ও ছাদ ভেঙে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। পুলিশকর্মীরা ছিটকে রাস্তায় পড়েন।

২০১৬ সালে লরির ধাক্কায় কুলগাছিয়ার কাছে মুম্বই রোডে মারা যান উলুবেড়িয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর দেবাশিস চক্রবর্তী। ২০১৯ সালে লরির ধাক্কায় খলিসানির কাছে মুম্বই রোডে মারা যান রাজাপুর থানার এএসআই দীপঙ্কর সাহা। ২০২২ সালে রানিহাটিতে মুম্বই রোডে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল গাড়ির ধাক্কায়। ওই বছরই উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরে মিঠুন রায় নামে এক সিভিক ভলন্টিয়ার মারা যান পথ দুর্ঘটনায়।

হাওড়ায় মুম্বই রোডের আশেপাশের বাসিন্দাদের অনেকে জানালেন, পুলিশ মাঝে মধ্যেই মুম্বই রোডে গাড়ি থামিয়ে টাকা তোলে। তখন লরি চালকেরা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে পালাতে যান। কোনও গাড়িকে তদন্তের কারণে ধাওয়া করলে গতি বেড়ে যায়। তখনও দুর্ঘটনা ঘটে।

গাড়ি থামিয়ে টাকা তোলার কথা মানতে চাননি পুলিশ কর্তারা। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার ক্ষোভ, ‘‘আমরা মাঝে মধ্যেই রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করি। কিন্তু তখন কেউ গাড়ি নিয়ে পালাতে গেলে আমরা এঁটে উঠতে পারি না। ওই গাড়ি নিয়েই কখনও দুষ্কৃতী ধরতে যেতে হয়। প্রতিপদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’’

হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ১২টি থানা, তিনটি তদন্তকেন্দ্র, তিনটি ফাঁড়ি, তিনটি ট্র্যাফিক গার্ড এবং জেলা পুলিশের সদর দফতর— সর্বত্রই সাধারণ পুলিশকর্মীদের যাতায়াতের গাড়ির অবস্থা তথৈবচ বলে জানা গেল। গাড়ির সমস্যার কথা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা মানতে চাননি। বাগনানের ঘটনায় কেন ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ভোরের কুয়াশা বা দ্রুত গতিতে ট্রাক চালানোর জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরে মুম্বই রোডের উপরে টহলদারি পুলিশের গাড়িওঠা নিষেধ ছিল। টহলদারিগাড়িগুলি মুম্বই রোডের সার্ভিস রোড অথবা রাজ্য সড়কে থাকত। মুম্বই রোডে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় ফের মুম্বই রোডে টহলদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার তদন্ত হয়েছে, ঘাতক গাড়িগুলিকে খুঁজে বার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনিঅবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবারের ঘটনায় ঘাতক গাড়ির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বই রোডে অভিযান চালায় হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ। কোন কোন এলাকায় নিরপাত্তার ঘাটতি আছে, তা খতিয়ে দেখেন পুলিশ কর্তারা। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, "মুম্বই রোডের কোথায় আলো কম, রাস্তার নির্মাণে কোনও ত্রুটি আছে কি না, সে সব খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই সব বিষয় জাতীয় সড়ক সংস্থার গোচরে আনা হবে।" জাতীয় সড়কে পুলিশের পক্ষ থেকে বহু সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আরও সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন আছে। জাতীয় সড়ক সংস্থাকেওসিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য অনুরোধ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy