পুরস্কার নিচ্ছেন রাজীবের মা। নিজস্ব চিত্র।
বছর সাতেক আগে নদিয়ার যুবক রাজীব দাস যখন ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত বাঁশতলা গ্রামের জীর্ণ জুনিয়র হাইস্কুলে পড়াতে গেলেন, এ তল্লাটে যেন থমকে ছিল শৈশব-কৈশোর! এক সময়ের মাওবাদী তকমা আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলেছিল এখানকার জীবনযাত্রা। জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে একের পর এক খুন, অপহরণ, নাশকতার সাক্ষী ছিল এই বাঁশতলা।
এখন ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে স্কুলে যায় (করোনা-কালে অবশ্য স্কুল বন্ধ)। তাঁদের মায়েরা পড়ুয়ার বেশে যান ‘বিন্দুর পাঠশালা’য়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে আয়ের মুখ দেখেন মেয়েরা। সাংস্কৃতিক উৎসবে মেতে ওঠে শাল গাছে ঘেরা প্রান্তর। ছেলেবুড়ো সকলেই বলেন, গ্রামের এ হেন প্রাণপ্রাচুর্যের কারিগর সবাইকে আপন করে নেওয়া ইতিহাসের ‘মাস্টার’ রাজীবই।
তবে, এত সুখের মাঝে আজ রাজীব নেই। কিডনির অসুখে বছর খানেক আগে মারা যান মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। তাঁর স্বপ্ন সফল করতে চেষ্টার কসুর করবেন না, সেই শপথ নিয়েছেন গ্রামবাসী। রাজীবের কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের তরফে অনন্য মানবিক কাজের জন্য এ বারের ‘সুদক্ষিণা লাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হল তাঁর উদ্দেশ্যে।
সম্প্রতি শ্রীরামপুরে হাসপাতাল ভবনে এসে পুরস্কার নেন রাজীবের মা এবং ছোটবেলার এক সহপাঠী। পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে স্মারক। পুরস্কার তুলে দেন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নানা ক্ষেত্রে সামাজিক অবক্ষয়ের এই সময়ে রাজীবের মতো চরিত্রেরা যত আসে, সমাজের তত মঙ্গল।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, রাজীব ওই স্কুলে চাকরি পাওয়ার সময় সেখানে পড়ুয়া কার্যত ছিল না। তবে, রাজীব হাত গুটিয়ে বসে থেকে মাইনে নিতে চাননি। তিনি পড়ুয়া জোগাড় করে আনেন। পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৩০০ জনে দাঁড়ায়। গ্রামের মহিলাদের জন্য তিনি শুরু করেন ‘বিন্দুর পাঠশালা’। যেখানে সন্তানদের হাত ধরে মায়েরা অক্ষর চিনতে শেখেন। এর পাশাপাশি গ্রামে মহিলাদের ১০টি স্বনির্ভর দল গড়ে তোলেন রাজীব। তাদের কেউ পশুপালন করে। কেউ পাঁপড় বা অনান্য খাবার বানায়। ছোটদের নাটক শেখাও রাজীবের উৎসাহে। তাদের অভিনীত নাটক প্রশংসিত হয় কলকাতার মঞ্চে।
পুরস্কার নিতে এসে রাজীবের মা জানান, ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক, আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবে বাঁশতলা সমৃদ্ধশালী হোক, তিনি সেটাই চান। বলতে বলতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি মা।
শ্রমজীবী হাসপাতালের তরফে ‘শর্মিলা ঘোষ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০’ পেলেন সায়ন্তনী পুততুণ্ড। এই সম্মান তিনি পেলেন দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ গল্পের জন্য। করোনাকালের তীব্র সামাজিক বৈষম্য এই গল্পে উঠে এসেছে। পুরস্কারদাতাদের মনে হয়েছে, সায়ন্তনীর দক্ষ কলমে দগদগে সামাজিক ব্যাধির এক টুকরো জলন্ত ছবি চোখের সামনে পরিষ্কার হয়েছে। সায়ন্তনীর হাতে স্মারক এবং নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন কলেজ-শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক সত্রাজিৎ গোস্বামী। চিকিৎসার পাশাপাশি শ্রমজীবী হাসপাতাল যে ভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের শরিক হচ্ছে, তার প্রশংসা করেন সত্রাজিৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy