Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Shyampur School Principal

প্রধান শিক্ষক অসুস্থ, স্কুল চালাচ্ছেন মেয়ে

বাবার চন্দন দে’র পদে ‘প্রক্সি’ দেওয়া মেয়ে রিয়া অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। তিনি বরং ‘অন্যায়’ দেখেছেন মঙ্গলবার সাংবাদিকেরা স্কুলে যাওয়ায়।

বাবার বদলে ক্লাস নিচ্ছে মেয়ে।

বাবার বদলে ক্লাস নিচ্ছে মেয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭
Share: Save:

সরকারি স্কুল। প্রধান শিক্ষক অসুস্থ বলে পরিবারের দাবি। তিনি স্কুলে আসেন না। তাঁর পরিবর্তে স্কুল চালাচ্ছেন মেয়ে। যদিও, তিনি স্কুলের কেউ নন। হাওড়ার শ্যামপুর ১ ব্লকের বিনোদচক তফসিলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনা জানাজানি হতে শোরগোল পড়েছে। তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা দফতর।

বাবার চন্দন দে’র পদে ‘প্রক্সি’ দেওয়া মেয়ে রিয়া অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। তিনি বরং ‘অন্যায়’ দেখেছেন মঙ্গলবার সাংবাদিকেরা স্কুলে যাওয়ায়। রীতিমতো চোটপাট করেছেন তাঁদের উপরে। বাড়ি থেকে মা-কাকিমাকে ডেকে এনেছেন। বলেছেন, ‘‘বাবা তাঁর অফিসের অনুমতি নিয়েই আমায় পাঠিয়েছেন। বাবা অসুস্থ, তাই আসতে পারেন না। তাঁর হয়ে আমি পড়ালে ক্ষতি কোথায়? এটা গ্রামবাসী সকলেই জানেন। বাবার কাজ আমি করে দিচ্ছি।’’

ওই যুবতী এমন যুক্তি সাজালেও বিষয়টি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেই সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে স্কুলে পাঠানো হয়েছে। তিনি তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। যদি ঘটনা সত্যি হয়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’’ সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক নীলাঞ্জনা দীর্ঘাঙ্গি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

স্কুলে পড়ুয়া জনা তিরিশ। চন্দন বাদে স্কুলে এক জন পার্শ্বশিক্ষিকা রয়েছেন। মঙ্গলবার ছিল ‘বুক ডে’। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, প্রধান শিক্ষক আসেননি। রিয়া ক্লাসে পড়াচ্ছেন। ছবি তুলতে দেখেই তিনি সাংবাদিকদের উপরে তেড়ে আসেন, হুমকি দেন। বাড়ির লোকজনকে ডেকে আনেন। ক্যামেরায় ধাক্কাও মারেন।

চন্দনের বাড়ি স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে। গ্রামবাসীরা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন না। রিয়াই স্কুল চালান। অভিভাবকরা কিছু জিজ্ঞাসা করলে কটূক্তি করেন। ভয়ে অভিভাবকরা কিছু বলেন না। চন্দনের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিকেলে তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলে রিয়া ধরে বলেন, ‘‘এখন বাবার সঙ্গে কথা বলা যাবে না।’’ বলেই ফোন কেটে দেন। জানা গিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে চন্দনের অবসর নেওয়ার কথা।

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। শ্যামপুরের বিজেপি নেতা তথা শিক্ষক অতনু সাহু বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করে দিল তৃণমূল সরকার। এটা তারই উদাহরণ। যিনি শিক্ষক তিনি স্কুলে যাচ্ছেন না, তাঁর হয়ে প্রক্সি দিচ্ছেন মেয়ে! এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে! এখনই ওঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ হাওড়া জেলা সিপিএম সম্পাদক দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা দফতরটাই যখন জেলের মধ্যে, তখন যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল করতে পারে এই সরকার, সেটা মানুষ দেখুক।’’

তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের নেতা জয়ন্ত বেরা বলেন, ‘‘যত দূর জানতাম, চন্দনবাবু দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন। সঙ্গে মেয়ে যেতেন বাবাকে দেখাশোনার জন্য। কিন্তু চন্দনবাবু না-গিয়ে যদি তাঁর মেয়ে স্কুল পরিচালনা করেন, তা হলে ব্যাপারটা খুবই খারাপ। এই জিনিস সমর্থন করে না আমাদের সংগঠন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy