চিন্তিত রোগীর পরিজনেরা। চুঁচুড়া হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।
একই দিনে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে সিজ়ার হয়েছিল পাঁচ মহিলার। তার পরেই তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাঁদের মধ্যে বুধবার এক জনের মৃত্যু হয়েছে অন্য হাসপাতালে। বাকিরা সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
হুগলির সদর হাসপাতালের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। প্রসূতিদের আত্মীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতি বা অপারেশন থিয়েটারে সংক্রমণ থেকেই এই ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা নির্দিষ্ট কোনও কারণ জানাতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর জানান, কী কারণে এমনটা হল, স্পষ্ট নয়। তবে, ওষুধ বা সংক্রমণ থেকে হতে পারে। সঠিক কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনই হাসপাতালের গাফিলতির অভিযোগ না মানলেও চিকিৎসকের কোনও ভুল রয়েছে কি না, তাও দেখা হবে বলে তিনি জানান।
অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসককে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি। হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডল জানান, কারণ খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটির জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, চুঁচুড়ার মনসাতলার বাসিন্দা বছর আঠাশের গোলাফসা খাতুন বেগম, ব্যান্ডেলের বছর ছাব্বিশের সাজিনা বিবি এবং পোলবার রাজহাটের বছর সাতাশের গোলাফসা খাতুন গত সোমবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চিকিৎসক শবনম বানু ওই তি জন-সহ মোট পাঁচ জনের অস্ত্রোপচার করেন। ওই তিন মহিলার মধ্যে এক জন পুত্রসন্তান, দু’জন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তিন জনেরই এটি দ্বিতীয় সন্তান।
অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই পাঁচ প্রসূতিরই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতেই তাঁদের সিসিইউ-তে এবং সদ্যোজাতদের এসএনসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের খরচে দুই প্রসূতিকে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করেন। তাঁদের মধ্যে নৈহাটির বাসিন্দা অঞ্জলি মণ্ডল বুধবার রাতে মারা যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইমামবাড়া হাসপাতালে সদ্যোজাত নাতিকে দেখতে এসে অঞ্জলির শাশুড়ি পলি মণ্ডল জানান, সিজ়ারের পর থেকে বৌমার রক্তচাপ কমছিল না। মঙ্গলবার একবার খিঁচুনি হয়। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। সে দিন ডায়ালিসিস করিয়ে রাতে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ সেখানে ডায়ালিসিস করানোর সময় বৌমা মারা যান।
ইমামবাড়া হাসপাতাল সূত্রে খবর, সাজিনাকে বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি বাকি দুই প্রসূতির অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। তাঁদেরও কলকাতায় পাঠানো হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের তরফে সাজিনার পরিবারকে জানানো হয়, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে সিসিইউ শয্যা ফাঁকা মিলছে না। মিললে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগে আত্মীয়েরা। সাজিনার স্বামী পেশায় হকার শেখ সামেদ বলেন, ‘‘স্ত্রীর কী হয়েছে,
কেন হয়েছে, কেমন আছে সঠিক ভাবে কেউ বলছেন না। এই উৎকণ্ঠায়
থাকা যায়!’’
গোলাফসা খাতুন বেগমের স্বামী শেখ কাজলের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের গাফিলতিতেই এই ঘটনা। অপারেশন থিয়েটারে সংক্রমণই মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে।’’ কাজলের ভাই শেখ সাহিদ জানান, শবনমের কাছেই চিকিৎসা চলছিল বৌদির। কী এমন হল যে মরণ-বাঁচন সমস্যা হল? প্রশ্ন সাহিদের।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই প্রসূতিদের রক্তচাপজনিত সমস্যার পাশাপাশি কারও কারও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এতে সমস্যা হতে পারে। রক্তে অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ এবং ওষুধজনিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সদ্যোজাতেরা ভাল আছে বলে হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy