দেওয়াল থেকে ইতিউতি উঁকি দিচ্ছে বট-অশ্বত্থ। নিত্যদিন ভেঙে পড়ছে চাঙড়। খসছে পলেস্তারা। ফাটল ধরছে মেঝেয়। কড়ি-বড়গার খাঁজে বাসা বাঁধছে ঘুঘু। স্কুলভবনের এ হেন অবস্থায় প্রতিদিনই পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে চন্দননগর পুরসভা পরিচালিত হাটখোলার শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যাপীঠে (ইংরেজি মাধ্যম)। স্কুলভবন সংস্কারের দাবি তুলেছে নাগরিক সমাজ। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে বুধবার বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। প্রধান শিক্ষিকা কস্তুরী রায়ের হাতে স্মরকলিপিও তুলে দেওয়া হয়।
ওই বাম ছাত্র সংগঠনের হুগলি জেলা কমিটির সম্পাদক অর্ণব দাসের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত বার্ষিক ২৪০ টাকার অনেক বেশি (ছাত্রপিছু গড়ে ৩ হাজার টাকা) ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্কুলভবন সরানো হচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা কোথায় যাচ্ছে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে ভবন সংস্কার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্ণব।
অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কথা মানছেন কস্তুরী। তাঁর দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। সুষ্ঠু ভাবে স্কুল চালানোর জন্য প্রায় ২৫ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা তাঁদের বেতন এবং শিক্ষার উন্নতিতে ব্যয় হয়।’’ একই দাবি মেয়রেরও। তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। ভাল পঠনপাঠন বজায় রাখতে গেলে একটু বেশি টাকা লাগে। সেটাই নেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিদ্যালয়ের সমস্যা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় পুর দফতরে জানানো হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বেশিরভাগটা শিক্ষা দফতরের হাতে থাকলেও পুর দফতরের হাতেও রয়েছে কিছু প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরসভা তাদের স্কুলগুলি পরিচালনা করে। তাই এই বিদ্যালয়গুলি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের আওতাধীন থাকে না। শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত নিয়মকানুন ও সুযোগ-সুবিধা স্কুলগুলিতে একই থাকলেও পুর দফতরই এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করে।
দীর্ঘদিন ধরে পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলিতে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। কস্তুরী জানান, শ্রেণিপিছু তিনটি করে বিভাগে ১৮০০-র বেশি ছাত্র রয়েছে। স্কুলে একজনও করণিক নেই। সব কাজ নিজেদের করতে হয়। তাই মাত্র ২৭ জন স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো সম্ভব নয়। সে জন্যই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়েছে। স্কুলভবনের তেতলার অবস্থা আরও শোচনীয়! সেখানকার পাঁচটি ঘরে পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই কমেছে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা। যার জেরে প্রতিদিন এক একটি শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
ওই ভবনটি ফরাসি আমলে শহরের এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের ছিল। পরে তা পুরসভার হাতে আসে। ১৯৭৩ সালে স্কুল স্থাপিত হয়। পুরনো ওই ভবনের সংস্কার শেষ বার কবে হয়েছে, স্থানীয়েরা মনে করতে পারছেন না। এলাকাবাসী তপন মোদক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলের কার্নিসের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়েছিল। ভাগ্যিস নীচে কেউ ছিলেন না!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)