চন্দননগর রবীন্দ্রভবন এবং স্ট্র্যান্ড। নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ হতে চলেছে চন্দননগর রবীন্দ্রভবনে। তার সামনে স্ট্র্যান্ডেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে না। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চন্দননগর পুরসভা। এর পিছনে সাংস্কৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির সবুজ বজায় রাখার কারণ দেখাচ্ছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সাংস্কৃতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ চেনা ছবি। ফলে, চন্দননগর পুরসভার এই সিদ্ধান্তে শোরগোল পড়েছে। শুরু হয়েছে প্রতিবাদও।
কেন এই পদক্ষেপ?
পুরসভার যুক্তি, রবীন্দ্রভবন একটি সাংস্কৃতিক ভবন। তার সামনের জায়গা (স্ট্র্যান্ড) হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃত। তাই, ওই ভবন এবং সংলগ্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রয়োজন। সেই কারণেই রবীন্দ্রভবন-সহ সংলগ্ন জায়গায় কোনও রাজনৈতিক দল বা তার শাখা সংগঠনের কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পুরসভার সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, মেয়র-পারিষদ বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি কাউন্সিলরদের বৈঠকে তা পাশ হয়েছে।
অনেকের প্রশ্ন, ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কি পুর-কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়? প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষ খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাতে সমাজকর্মীবিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, নাট্যকর্মী তুষার ভট্টাচার্য, সঙ্গীতশিল্পী রাহুল দত্ত, সাংস্কৃতিক কর্মী শংকর কুশারীর বক্তব্য, সংস্কৃতির সঙ্গে রাজনীতির বিরোধ রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না। তাঁদের অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত এই ভবনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে পরোক্ষ ভাবে কবির জীবনদর্শন এবং মর্যাদাকে আঘাত করা হচ্ছে। কবির কাছে রাজনীতি কখনও ব্রাত্য ছিল না।
ক্ষোভ জমেছে রাজনৈতিক মহলেও। চন্দননগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ও কাউন্সিলর শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনীতি সংস্কৃতিরই অঙ্গ। আমরা বলে থাকি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি। পুরসভা যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁরা কি নিজেদের অ-সংস্কৃতিমান মনে করছেন? তাঁরাও তো দলীয় কোনও কর্মসূচি ওখানে করতে পারবেন না।’’
শহরবাসীর একাংশের ক্ষোভ, স্ট্র্যান্ডে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে ‘গ্রিন জ়োন’ ঘোষণার পরে। অথচ, সেখানে সরকারি অনুষ্ঠান হয়। এক নাগরিকের প্রশ্ন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে কি দূষণ ছড়ায় না?’’ প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলের একাংশের মধ্যেও।
গত বিধানসভা নির্বাচনে চন্দননগরে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন দলের রাজ্যনেতা দীপাঞ্জন গুহ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজনীতি সংস্কৃতির বাইরে নয়। ওই সিদ্ধান্ত পুরসভা বা শাসক দলের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি। কারণ, ওদের (তৃণমূল) দল আর সরকার এক। সরকারি ব্যানারে ওরা দলের অনুষ্ঠান করে। সেটার রাস্তা খোলাই রইল। বিরোধী দল তা পারবে না। বিরোধী দলকে আটকাতেই ওদের এই সিদ্ধান্ত।’’
কোনও অভিযোগই মানছেন না মেয়র রাম চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন এলাকা গ্রিন জ়োন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হলে ওই পরিবেশ বজায় রাখা যাবে না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে এই অসুবিধা নেই। তাদের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা যাবে। আরোপিত শর্তের মধ্যেই তারা অনুষ্ঠান করবে। আমরা যে দল করি, আমরাও তো কোনও কর্মসূচি নিতে পারব না। রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এখানে অধিকারেরও কোনও ব্যাপার নেই। সার্বিক ভাবে সাধারণ মানুষের স্বার্থেই এটা করা হচ্ছে।’’ চন্দননগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy