প্রতীকী ছবি।
শৈশব পেরিয়ে তাঁরা কৈশোরে। কিন্তু পড়াশোনা আর খেলাধুলোয় মেতে থাকা নয়, দিনের ১২ ঘণ্টা তাদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল কারখানায়। একটি ছেলে বা মেয়ের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই বয়সে কাজের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। সেই সব নিয়ম না মেনে পনেরো থেকে সতেরো বছরের ছয় কিশোরকে ডানকুনির একটি কারখানায় কাজ করানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার তাদের উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরদের এক জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। বাকিরা বিহারের বাসিন্দা। জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির (চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন শুভাশিস নন্দী জানান, ছেলেগুলিকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। কোন পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার ছেড়ে দূরে কাজে আসতে হল, দেখা হবে।
দিন কয়েক আগে সূত্র মারফত চাইল্ড লাইনে খবর আসে, বেশ কয়েক জন কিশোরকে দিয়ে ডানকুনির চাকুন্দিতে দিল্লি রোডের ধারে ডায়েরি তৈরির একটি কারখানায় কাজ করানো হচ্ছে। চাইল্ড লাইনের তরফে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট নানা দফতরে বিষয়টি জানানো হয়। শ্রীরামপুর শ্রম দফতর, জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিট, চাইল্ড লাইন এবং ডানকুনি থানার আধিকারিকরা বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই কারখানায় যান। সেখানে কর্মরত অবস্থায় ওই ছ’জনকে পাওয়া যায় বলে শ্রম দফতরের খবর।
সরকারি আধিকারিকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই কিশোরদের দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তারা পড়াশোনা করে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে দাবি করেন, ঠিকাদার তাদের নিয়োগ করেছেন। ছেলেগুলিকে উদ্ধার করে অনলাইনে সিডব্লিউসি-র সামনে হাজির করানো হয়। ওই কমিটি তাদের হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
সিডব্লিউসি-র বক্তব্য, কারখানায় ছেলেগুলির শিশু অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছিল। মানসিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। শুভাশিসবাবু জানান, হোমে তাদের কাউন্সেলিং হবে হবে। পরিবারের মধ্যে থেকে তারা বেড়ে উঠবে, পড়াশোনা করবে, সেটাই বাঞ্ছনীয়। কেন তাদের এত দূরে কাজে আসতে হল, তা দেখা হবে। প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে অনুসন্ধান (সোশাল ইনভেস্টিগেশন) করা হবে। সেই রিপোর্টের উপরে ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে আইন মোতাবেক পদক্ষেপ শুরু করেছে শ্রম দফতরও। ওই দফতর সূত্রের খবর, আইন লঙ্ঘন করে ওই কিশোরদের দিয়ে কাজ করানো হতো, তার প্রমাণ মিলেছে। সংশ্লিষ্ট নানা আইনে ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কারখানা থেকে কিছু নথি চাওয়া হয়েছে।
শ্রম আধিকারিকরা জানান, ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের দিয়ে কাজ করানো নিষিদ্ধ। ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সিদের দিয়ে ঝুকিপূর্ণ নয়, এমন কাজ করানো যেতে পারে। কিন্তু তাতেও নানা বিধিনিষেধ থাকে। তাদের দিয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো আইনবিরুদ্ধ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই কিশোরদের দিয়ে তার থেকে অনেক বেশি সময় কাজ করানো হতো।
শিল্পাঞ্চলে অন্যান্য কারখানাতেও ছোটদের দিয়ে কাজ করানো হয় কি না, এই ঘটনায় সেই প্রশ্ন উঠছে। শ্রম আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ছোটদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিয়মিত অভিযানও চলে।
প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষের কাজ চলে গিয়েছে। কারও উপার্জন কমেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষত স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছেলেকেই পড়াশোনা ছাড়িয়ে পরিবারের তরফে কাজে পাঠানোর আশঙ্কা থাকছেই। এই কিশোরদের ক্ষেত্রেও এটা কারণ কি না, সেটি দেখার বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy