জাঙ্গিপাড়ায় পদযাত্রা। নিজস্ব চিত্র।
ওদের কারও বয়স ৮ বছর। কারও ৯-১০। কেউ আর একটু বড়।
রবিবার সকালে শেওড়াফুলি স্টেশন চত্বর থেকে ওই ‘বাহিনী’ ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। কেউ প্ল্যাটফর্মে, কেউ টিকিট কাউন্টারের সামনে। কেউ ওভারব্রিজের মাথায়। কেউ একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল জিটি রোডের মুখে। সকলেই প্ল্যাটফর্মে থাকে।। ট্রেনযাত্রী বা পথচলতি মানুষকে তারা বলছিল, বাজি পোড়ালে অনেক ক্ষতি। কেউ যেন বাজি না পোড়ান। সেই সংক্রান্ত লিফলেটও বিলি করল তারা।
হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ। কিন্তু চোরাগোপ্তা বাজি বিক্রি চলছেই। ফলে, কালীপুজো, দীপাবলিতে পোড়ানোর আশঙ্কা থাকছেই। তাই আদালতের নির্দেশ মানার আর্জি জানিয়ে রবিবার হুগলির ১৪টি স্টেশন চত্বরে প্রচার করে বিভিন্ন সংগঠনের একজোট হয়ে গড়ে তোলা ‘বাজিবিরোধী যৌথ মঞ্চ’। মাইকে সচেতন করার পাশাপাশি বাজি এবং ডিজে-র বিপদ নিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়। সকালে উত্তরপাড়া স্টেশনে প্রচার শুরু হয়। পান্ডুয়া স্টেশনে যখন প্রচার শেষ হয়, সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে।
শেওড়াফুলিতে ওই সব প্ল্যাটফর্ম শিশুদের পড়ায় স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রচারে যোগ দিয়েছিলেন। এক বালিকা বলে, ‘‘বাজিতে মানুষের শরীরের খুব ক্ষতি হয়। দাদা-দিদিরা (শিক্ষক-শিক্ষিকা) এটা আমাদের বলেছে। তাই সবাইকে বারণ করছি।’’
বিভিন্ন স্টেশনে অনেকে এসে বাজি এবং ডিজের কারণে তাঁদের অসুবিধার কথা জানান। থানায় অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি, এমন অভিজ্ঞতার কথাও কেউ কেউ জানান। সন্ধ্যায় খন্যান স্টেশনে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। বেশি আওয়াজে বুক ধড়ফড় করে। অথচ দু’দিন ধরে বাজি ফাটছে। পুলিশকে জানানোর সাহস অবশ্য পাননি।
মানকুণ্ডুর গ্রিন পার্কের একটি আবাসনের এক মহিলা দুপুরে স্কুটি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রচার শুনে দাঁড়িয়ে পড়েন। বলেন, তিনি এলাকায় প্রচার চালাতে চান। কিছু লিফলেট চেয়ে নেন। কোন্নগর স্টেশনে কিছু টোটো-চালক এগিয়ে আসেন। টোটোর সামনে লিফলেট সেঁটে দেন। তাঁরাও কিছু লিফলেট চেয়ে নেন বিলির জন্য। বৈদ্যবাটীর বাসিন্দা অর্পিতা দাস ফ্ল্যাট থেকে নেমে এসে বাজি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, বাজি বা ডিজে নিয়ে অভিযোগ কোথায় জানাবেন। প্রচারকারীরা জানান, স্থানীয় থানায়, বিডিও বা মহকুমাশাসকের দফতরে জানানো যেতে পারে। অভিযোগ জানানোর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, বাজিবিরোধী যৌথ মঞ্চ, পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের নম্বরও লিফলেটে দেওয়া হয়।
মঞ্চের সদস্যদের বক্তব্য, বহু মানুষই বাজি-ডিজে নিয়ে অতিষ্ঠ হলেও মুখ বুজে সেই অত্যাচার সহ্য করেন। অভিযোগ করতে ভয় পান। তাঁদের আর্জি, সহ-নাগরিকদের সমস্যার কথা ভেবে এবং শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত। তাঁরা চান,
পুলিশ-প্রশাসন প্রচার এবং নজরদারিতে জোর দিক। নির্দেশ অমান্য করলে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নাগরিকদের উদ্যোগে এ দিন
প্রচার হয়েছে জাঙ্গিপাড়া, রাজবলহাটেও। জাঙ্গিপাড়ার কৃষ্ণনগরের একটি ক্লাবের উদ্যোগে বিকেলে মিছিল বের হয়। স্কুল পড়ুয়া, মেহনতি মানুষও শামিল হন। রাজবলহাটে নাগরিক মিছিলে ছাত্রছাত্রী থেকে চিকিৎসক, মহিলা, বয়স্করাও পা মেলান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy