Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Uluberia Rice Mill

বরাত কম পেলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ‘অঙ্কিত’

হাওড়া জেলায় একটা সময়ে ৭০ শতাংশ ধানই পেত অঙ্কিত। বাকি ধানের বরাত পেত দু’তিনটি চালকল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অঙ্কিতের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ওঠে।

এই চালকলেই তল্লাশি চালায় ইডি।

এই চালকলেই তল্লাশি চালায় ইডি। নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৭
Share: Save:

একাধিক অভিযোগ ওঠায় উলুবেড়িয়ার ‘অঙ্কিত চালকল’কে গত কয়েক বছর ধরে বরাত অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল খাদ্য দফতর। আগে হাওড়া জেলার সিংহভাগ চালের বরাত পেত তারা। গত কয়েক বছর ধরে মাত্র ১০ শতাংশে এসে ঠেকেছে সেই পরিমাণ।

চলতি মাসের ৪ ও ৫ তারিখ রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার এই চালকলে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চালকলটি অনেক বছর ধরেই ধান থেকে চাল তৈরির বরাত পেয়ে আসছে। একটা সময়ে জেলার সিংহভাগ বরাত পেত অঙ্কিত। কিন্ত বেশ কিছু অভিযোগ উঠতে থাকায় বছর পাঁচেক হল বরাত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি বছরে হাওড়ায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন। গত বারের থেকে যা সামান্য বেশি। এ বছর ধান কেনার দায়িত্ব পেয়েছে জেলার চারটি চালকল। তাদের মধ্যে আছে বিতর্কিত অঙ্কিতও। চলতি মরসুমে ধান কেনা শুরু হয়েছে পয়লা নভেম্বর থেকে। কুলগাছিয়ার এই চালকলটিও বরাত পেয়েছে। ইডি হানার পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্কিতকে প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, এ বিষয়ে রাজ্য খাদ্য দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি।

কী ভাবে ধান পায় চালকলগুলি?

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতি বছর খাদ্য দফতর থেকে জেলায় চাষিদের কাছ থেকে কত ধান সেই মরসুমে কেনা হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। তার পরে ধান কেনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন কৃষি সমবায় সমিতিকে। খাদ্য দফতর নিজেও কিছু ধান সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কেনে। খাদ্য দফতর এবং সমবায় সমিতি ধান কিনে তা তুলে দেয় চালকলগুলির হাতে। খাদ্য দফতর চাষিদের ধান কেনার টাকা দেয়। সেই ধান চলে যায় চালকলগুলির কাছে। চালকলগুলি ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করে খাদ্য দফতরকে দিয়ে দেয়। সেই চালই খাদ্য দফতর রেশনে ব্যবহার করে। ধান ভাঙানোর জন্য চালকলগুলি খাদ্য দফতর থেকে টাকা পায়। এটাই চালকলের লাভ।

হাওড়া জেলায় একটা সময়ে ৭০ শতাংশ ধানই পেত অঙ্কিত। বাকি ধানের বরাত পেত দু’তিনটি চালকল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অঙ্কিতের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ওঠে। তার মধ্যে প্রধান, তারা সময় মতো ধানের বিনিময়ে চাল সরকারকে দিত না। অঙ্কিত কর্তৃপক্ষ নিজেরা গ্রামে গ্রামে ফড়ে পাঠিয়ে চাল কিনে নিতেন বলেও অভিযোগ। চাষিদের থেকে কেনা ধানের হিসেবেও হেরফের করা হত বলে অভিযোগ উঠেছে অঙ্কিতের বিরুদ্ধে। ইডি অভিযান বা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগের জবাব দেননি অঙ্কিত কর্তৃপক্ষ। ফোন করলেও ধরেননি। মোবাইলে মেসেজেরও জবাব মেলেনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চাষি পরিচয়ে ফড়েরা যাতে ধান কিনতে না পারে, সে কারণে জেলার পাঁচটি কিসান মান্ডি-সহ যেখানে যেখানে ধান কেনা হবে, সেখানে খাদ্য দফতর এবং সমবায় সমিতিগুলির হাতে 'পস' (পয়েন্ট অফ সেল) যন্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। আগেই খাদ্য দফতর চাষিদের আধার কার্ডের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিয়েছে। যে সব চাষি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন, তাঁরা ধান বিক্রি করতে এসে পস যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিলে তবেই তা বিক্রি করতে পারবেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ধান কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে রাজ্য সরকার নিত্যনতুন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যদি কুলগাছিয়ার বিতর্কিত চালকল নিয়ে কোনও বিশেষ নির্দেশিকা আসে, তা মেনে চলা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy