Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
River Erosion

হুগলিতে গঙ্গাভাঙন অব্যাহত, ঠেকানোর দাবি জোরালো

শনিবার চাঁপদানির কয়লাডিপো ঘাটের পাশে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ধস নামে। ফুট তিরিশেক দূরে রেললাইন আছে। একাধিক কারখানায় কাঁচামাল ওই রেলপথে সরবরাহ করা হয়।

চাঁপদানির কয়লাডিপো ঘাটে ভাঙছে গঙ্গার পাড়। ছবি: তাপস ঘোষ

চাঁপদানির কয়লাডিপো ঘাটে ভাঙছে গঙ্গার পাড়। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৯
Share: Save:

গঙ্গার গতিপ্রকৃতি চিন্তার ভাঁজ বাড়াচ্ছে হুগলিতে। ভাঙনের জেরে কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে ঘাট, কোথাও জমিজিরেত, কোথাও বসতভিটে। গঙ্গার নতুন করে হানাদারির মুখে পড়েছে চাঁপদানি। নদীর আগ্রাসন ঠেকাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইছেন সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাঙন রোধে অর্থ বড় সমস্যা। কেন্দ্র-রাজ্য এক সঙ্গে উদ্যোগী না হলে মুশকিল।’’

শনিবার চাঁপদানির কয়লাডিপো ঘাটের পাশে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ধস নামে। ফুট তিরিশেক দূরে রেললাইন আছে। একাধিক কারখানায় কাঁচামাল ওই রেলপথে সরবরাহ করা হয়। আশঙ্কা, অবিলম্বে গঙ্গাকে না ঠেকালে, ওই রেললাইন তলিয়ে যাবে। চাঁপদানি পুরসভার মুখার্জিঘাট থেকে পলতাঘাট পর্যন্ত ভাঙনের চোখরাঙানি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পিরতলা ঘাট।

পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র বলেন, ‘‘পিরতলা ঘাট মেরামতিতে রাজ্য সরকার ৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। তা নগণ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে আসুক।’’

বৈদ্যবাটী পুরসভার শেওড়াফুলি নিস্তারিণী কালীবাড়ি ঘাট, দু’পয়সা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকা, হাতিশালা ঘাট, রাজবংশীপাড়া ঘাট অস্তিত্ব সঙ্কটে। উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার শিবতলা শ্মশানঘাট এলাকায় প্রতি বছর নিয়ম করে পাড় ভাঙছে গঙ্গা। শ্রীরামপুরের চাতরা, মাহেশের একাংশেও গঙ্গার গতিবিধিতে ডরাচ্ছেন পাড়ের বাসিন্দারা।

বলাগড় ব্লকের জিরাট পঞ্চায়েতের খয়রামারিতে ধারাবাহিক ভাঙনে ভেসেছে আস্ত জনপদ। সম্প্রতি এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয় জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে। ভাঙন-চিত্রে রয়েছে শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের চাদরা। সম্প্রতি গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকাতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদী বিশেষজ্ঞ, পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, প্রকৃতিগত ভাবেই গঙ্গার পাড় ভাঙে। হুগলিতে গঙ্গাপাড়ে বেহিসেবি নির্মাণ, বালি তোলা, বসতি তৈরি, অবৈজ্ঞানিক ভাবে ইটভাটার পলি তোলার প্রবণতায় ভাঙন ত্বরাণ্বিত হয়েছে। অভিযোগ, বাঁশবেড়িয়ায় আইন না-মেনে গঙ্গা থেকে বালি তোলা চলছে। ব্যান্ডেলে একটি ইটভাটা বেআইনি ভাবে পলি তুলছে। অভিযোগ আরও আছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। চন্দননগরের স্ট্র্যান্ড লাগোয়া পাতালবাড়ি থেকে গোন্দলপাড়া জুটমিল লাগোয়া এলাকা ভাঙনের শঙ্কায়।

হুগলি উইমেন্স কলেজের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান, নদী গবেষক শ্যামলীনা গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রকৃতির নিয়মে গঙ্গা পথ পরিবর্তন করছে। আমাদের ভুল কাজ সেই গতি বাড়িয়ে তুলছে। গঙ্গাপাড় আটকে নদীর ধারণক্ষমতা হ্রাস করছি আমরা। বালি তোলা, মাটি কাটা তো রয়েছেই। কল-কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত জল গঙ্গায় মিশে পাড়ের মাটি গ্রাস করছে।’’ পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘যে নদীতে জোয়ার-ভাটা খেলে, তার ৪৭ মিটারের মধ্যে নির্মাণ নিষিদ্ধ। হুগলিতে কোথাও এই নিয়ম মানা হয় না। তাতেই ভাঙন ত্বরাণ্বিত হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

River Erosion hooghly river Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy