পুতুলের দেহ নিয়ে কাদের-কালেমরা। চুঁচুড়ায়। — নিজস্ব চিত্র
ওঁরা এতদিন পুতুলদিদির আপদে-বিপদে পাশে ছিলেন। গত শনিবার দিদি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পরে ওঁরাই বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি। সোমবার কাঁধে করেই সেই দিদির দেহ নিয়ে শ্মশানযাত্রা করলেন পড়শি-ভাই আব্দুল কালেম, শেখ রহিম, আব্দুল কাদেররা। তাঁদের কারও মুখে ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’, কারও মুখে ‘বলো হরি, হরিবোল’!
চুঁচুড়া ইমামবাড়া সংলগ্ন মুঘলপুরার বাসিন্দা ছিলেন কালম-রহিমদের ‘দিদি’ পুতুল চৌধুরী (৩৬)। অসুস্থ বৃদ্ধা মা শকুন্তলাদেবীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। পরিচারিকার কাজ করতেন। এলাকাটি সংখ্যালঘু প্রধান। পুতুলের পরিবারের প্রতি বরাবরই সহমর্মিতা ছিল পাড়ার আব্দুল, রহিমদের। গত শনিবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন পুতুল। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী মুসলিম ভাইরা। তাঁরাই দিদিকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
রবিবার বিকেলে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় পুতুলের। আইন মোতাবেক দেহ ময়নাতদন্ত হয়। তারপরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দেওয়া শংসাপত্র অনুযায়ী সোমবার পুতুলের দেহ তুলে দেওয়া হয় রহিমদের হাতে। আব্দুল-রহিমরাই হাসপাতাল থেকে দিদির দেহ মুঘলপুরায় বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শ্মশানযাত্রার জন্য চোখের জল ফেলতে ফেলতে রহিমরাই কাঁধে তুলে নেন পুতুলের দেহ। ওই পরিবারে যে আর কেউ নেই।
মৃতার মা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। শবযাত্রী রহিম কাদের বলেন, ‘‘সম্প্রদায় ভেদাভেদ করে কী হবে? মানুষ মানুষের পাশে না থাকলে জীবনটাই বৃথা।’’ কালেমের কথায়, ‘‘মৃত্যুর সময় দিদিরে পাশে নিজের বলে কেউ নেই। তাই আমরাই সৎকারে সঙ্গী হয়েছি।’’
মুঘলপুরা থেকে চুঁচুড়া শ্মশান। পথে পড়ল জেলা সংশোধনাগার। উল্টোদিকে তখন নজরুল-জয়ন্তীতে কবির মুর্তিতে মাল্যদানের অনুষ্ঠান চলছিল। গান বাজছিল— ‘মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান...’।
পুতুলদিদির শেষযাত্রায় সেই বার্তাই দিলেন কাদের-কালেমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy