Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
জানেন কি?
International Mother Language Day

ভাষা আন্দোলনে নেমে মমতাজ পেলেন তালাক

বিয়ের আগে মমতাজের নাম ছিল কল্যাণী রায়। ডাকনাম মিনু। ১৯২৩ সালে জন্মেছিলেন হাওড়ায়। বাবা রায়বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন।

মমতাজ বেগম। 

মমতাজ বেগম।  নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

কাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনে নেমে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ‘শহিদ’ হয়েছিলেন রফিক, জব্বার, সফিউর, সালাম, বরকতদের মতো তরুণরা। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার আন্দোলনে নেমে মমতাজ বেগম পেয়েছিলেন তালাক।

কে এই মমতাজ?

বিয়ের আগে মমতাজের নাম ছিল কল্যাণী রায়। ডাকনাম মিনু। ১৯২৩ সালে জন্মেছিলেন হাওড়ায়। বাবা রায়বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। মা মাখনমতিদেবী ছিলেন স্কুল -শিক্ষিকা। ম্যাট্রিক পাশের পরে রক্ষণশীল বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামা প্রমথনাথ বিশীর সৌজন্যে কল্যাণী ভর্তি হলেন বেথুন কলেজে। বিএ পাশ করলেন। চাকরি পেলেন স্টেট ব্যাঙ্কে। এখানেই আলাপ সিভিল সার্ভিস কার্যালয়ের অফিসার আব্দুল মান্নাফের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। বাড়ির অমতে বিয়ে। কল্যাণীর নতুন নাম হল মমতাজ বেগম। পিতৃগৃহের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হল। চলে গেলেন স্বামীর হাত ধরে ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করলেন বিএড। নারায়ণগঞ্জ মর্গান হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হলেন।

১৯৫২। শুরু হল বাংলা ভাষা আন্দোলন। নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠলেন মমতাজ। নিজের স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে করলেন বিরাট মিছিল। ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হলেন। খবর ছড়াতে ক্ষেপে উঠল মানুষ। পাকিস্তানি পুলিশের হাতে বিক্ষুব্ধ জনতার ৪৫ জন আহত হলেন। মমতাজের উপরে চলল পুলিশি নির্যাতন। শেষে সরকারি কর্মকর্তা স্বামীকে কাজে লাগানো হল! তিনি এসে মমতাজকে বললেন, ভাষা আন্দোলন ছেড়ে দেবেন, এই মর্মে বন্ড সই করে মুক্তির ভিক্ষা করতে। নচেৎ, তালাক দেবেন।

অনড় মমতাজ জানিয়ে দিলেন, তালাক দিলেও বাংলা ভাষা বাঁচানোর লড়াই থেকে সরবেন না। এই লড়াই তাঁর কাছে প্রাণের থেকেও বেশি। মমতাজকে সত্যি সত্যিই তালাক দিলেন মান্নাফ। ভাষা আন্দোলনের পথ আঁকড়ে রইলেন মমতাজ।

দেড় বছর পরে যখন হাজত থেকে মুক্তি পেলেন, তখন তাঁর পরিবার নেই। পরিজন নেই। যোগ দিলেন ঢাকার আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে। জীবন কাটালেন শিশুশিক্ষার বিস্তার আর বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে। ১৯৬৭ সালের ৩০ জুন প্রয়াত হন এই ভাষা-জননী।

গত বছর মার্চে তাঁর জন্ম-শতবর্ষ পেরিয়ে গেল।

(তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়,
আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী)

অন্য বিষয়গুলি:

Triple Talaq
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy