নর্দমায় জমে রয়েছে জল। শুক্রবার, দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
চার দিকে আগাছার জঙ্গল। সেখানে জমে বৃষ্টির জল। ভাসছে থার্মোকলের বাটি, বোতল। গোটা এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত লোহার ট্যাঙ্ক, ওষুধের ফেলে দেওয়া কার্টন। নিয়মিত পাঁক না তোলায় প্রতিটি নিকাশি নালার জল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
ছবিটা হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনের লক্ষ্মীনারায়ণতলার কাছে দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ভিতরের চত্বরের। হাওড়া পুরসভার দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গোটা হাওড়ার মধ্যে দক্ষিণ হাওড়ার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। অভিযোগ, ওই হাসপাতালই হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গির মশার প্রজননস্থল।
পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গির মরসুমের ৩৮তম সপ্তাহে হাওড়ায় প্রায় ৭০০ জন আক্রান্ত। তার এক-তৃতীয়াংশ রোগী রয়েছেন ওই নির্দিষ্ট এলাকায়। দক্ষিণ হাওড়ার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণতলা, নস্করপাড়া রোড, কোলে মার্কেট এলাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে কয়েক একর জায়গা নিয়ে থাকা দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ভিতরে বহু জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতালে ঢোকার মুখে এক দিকে যেমন নর্দমা দিনের পর দিন পরিষ্কার করা হয়নি, তেমনই আর এক দিকে আগাছার জঙ্গল ডুবে রয়েছে বৃষ্টির জলে। একই অবস্থা হাসপাতালটির মূল ভবনের চার পাশে। একতলার যে ওয়ার্ডে রোগী রয়েছেন, তার জানলার পাশেই নর্দমার জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, দিনে-রাতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন রোগীরা। বার বার অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষের হুঁশ নেই। এক ওয়ার্ড বয়ের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে একটি পরিত্যক্ত দোতলা ভবনে পড়ে থাকা জলের একাধিক ট্যাঙ্কে জমেছে বৃষ্টির জল। ওটাই মশার ডিম পাড়ার জায়গা।’’
সরকারি হাসপাতালেই যে মশা জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে, তা সরাসরি না মানলেও হাসপাতালের সুপার মানছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছিলেন। তবে সংখ্যাটা সম্প্রতি কিছুটা কমেছে বলে দাবি তাঁর।
সুপার রত্না দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকার অভাবে ওই জঙ্গল পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। মাস ছয়েক আগে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে পরিষ্কার করানো হয়েছিল। কিন্তু ফের একই অবস্থা হয়েছে। আমাদের আবাসনগুলির অবস্থাও শোচনীয়। মেঝে, দেওয়ালে নোনা ধরেছে।’’ সুপারের অভিযোগ, পুরসভাকে বার বার চিঠি দিয়ে নর্দমা, জঙ্গল পরিষ্কারের আবেদন করেছেন তিনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরকেও জানিয়েছেন। কিন্তু সাহায্য মেলেনি।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুপারের আবেদন মতো এক বার পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়মিত হাসপাতালের নর্দমা, জঙ্গল সাফ করা পুরসভার কাজ নয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের এক্তিয়ারভুক্ত। পুরসভার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম যে, হাসপাতাল চত্বর থেকে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। তার পরেও কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হননি কেন?’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। ওই হাসপাতালে জঞ্জাল ও জমা জল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুরসভার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy