Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
উঠছে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থার দাবি
Mustard Oil

mustard oil: হাওড়ায় বাড়ছে সর্ষের ফলন, লাভের গুড় খাচ্ছে ফড়েরা

প্রতিষ্ঠিত তেলকল-মালিকেরা মনে করছেন, বিপণন পদ্ধতি যতদিন অসংগঠিত থাকবে, ততদিন তাঁদের বা চাষিদের বিশেষ লাভ হবে না।

বাগনানের একটি তেলকলে চলছে উৎপাদন।

বাগনানের একটি তেলকলে চলছে উৎপাদন। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:১৬
Share: Save:

পাশাপাশি দুই জেলায় ছবিটা বিপরীত। কিন্তু সমস্যা একই।

অর্থকরী ফসল হিসেবে হুগলিতে আলু চাষে উৎসাহ প্রবল চাষিদের। তেলের দাম বাড়লেও সর্ষে চাষে তাঁদের তেমন আগ্রহ নেই। হাওড়ায় আবার আলু চাষ বিশেষ হয় না। এখানে সর্ষে চাষ বাড়ছে। কিন্তু তাতেও সাধারণ ক্রেতা, চাষি বা তেলকল-মালিক— কেউই স্বস্তিতে নেই। ফলে, এখানেও নাগালে আসেনি সর্ষের তেলের দাম। লাভের গুড় খাচ্ছে ফড়েরা।

হাওড়া জেলা কৃষি দফতরের হিসেবে, চলতি বছরে জেলায় সর্ষে চাষ হয়েছে ১৬০০ হেক্টর জমিতে। আগামী বছর তা বেড়ে ২০০০ হেক্টর জমিতে চাষ হতে পারে। সেই কারণে ইতিমধ্যেই চাষিদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে বেশি করে সার্টিফায়েড বীজ চাওয়া হয়েছে।

তাতেও লাভ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত তেলকল-মালিক। এখানে চাষিরা সর্ষে চাষ করে প্রথমত নিজেদের প্রয়োজন মেটান, তারপরে বাড়তি সর্ষে বিক্রি করে দেন। সর্ষে ভাঙিয়ে তেল করার জন্য জেলার কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতে প্রচুর ঘানি তৈরি হয়েছে। যা থেকে যুবকদের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। তারপরেও কোথায় সমস্যা?

প্রতিষ্ঠিত তেলকল-মালিকেরা মনে করছেন, বিপণন পদ্ধতি যতদিন অসংগঠিত থাকবে, ততদিন তাঁদের বা চাষিদের বিশেষ লাভ হবে না। তাঁরা জানান, এই ব্যবসাতে এখন লেনদেন করতে হয় সব রকম নিয়ম মেনে। কিন্তু জেলার বহু চাষিই সেই সব নিয়ম মানেন না। অথচ, তাঁরা নিয়ম মেনে তেলকলে সর্ষে বিক্রি করলে যেমন পরিবহণ খরচ কমত, তেমন তেলের দামের ক্ষেত্রেও কিছুটা ভারসাম্য রাখা যেত। কিন্তু তা না হওয়ায় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকে সর্ষে আনতে হচ্ছে তেলকল-মালিকদের। তাতে পরিবহণ খরচ বাড়ছে। ওই রাজ্যগুলি সর্ষের দাম বাড়ালে মিলের তেলের দামেও তার প্রভাব পড়ছে।

বাগনানের তেলকল-মালিক গঙ্গাধর বেতাল বলে, ‘‘সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সর্ষে কিনতে হলে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার। ন্যূনতম খাতাপত্র থাকাও প্রয়োজন। এ ছাড়াও দরকার সর্ষের গুণমান সংক্রান্ত শংসাপত্র। কিন্তু স্থানীয় চাষিদের কাছে কিছুই নেই।’’

তা হলে চাষিরা কোথায় সর্ষে বিক্রি করছেন? অনেকেই জানান, তাঁদের কাছ থেকে ফড়েরা এসে সর্ষে কিনে নিয়ে যান। নগদ কম মিললেও সরাসরি বিক্রি হয়ে যায় বলে তাঁরা আপত্তি করেন না। প্রতিষ্ঠিত তেলকল-মালিকেরা জানান, ফড়েরা ওই সর্ষে বিক্রি করেন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু তেলকলে। যেখানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ব্যবসা চলে বলে তাঁদের অভিযোগ। এর জেরে কম দামে বাজারে ভেজাল তেল আসছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।

গঙ্গাধরবাবু বলেন, ‘‘যেহেতু আমরা সব নিয়ম মেনে চলি, তাই তেলের দামও আমাদের সব দিক ভেবে ঠিক করতে হয়। কিন্তু ভেজাল তেল কম দামে বাজারে চলে আসায় প্রতিযোগিতায় আমাদের কোনওমতে টিকে থাকতে হচ্ছে। সর্ষের তেলে ভেজাল দেওয়া সহজ। স্বাস্থ্য দফতর অভিযান চালালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু সেই অভিযান হচ্ছে কোথায়?’’ এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, ভেজাল তেল ধরার অভিযান চালানোর মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো তাদের নেই।

তবে, জেলায় সর্ষের উৎপাদন যে ভাবে বাড়ছে তাতে এর সুষ্ঠু বিপণনের পরিকাঠামো গড়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল। তিনি নিজেই সর্ষে চাষ করেন। চাষিরা যাতে সরাসরি মিলে সর্ষে বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যাপারে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য তিনি রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও রমেশবাবু জানান।

অন্য বিষয়গুলি:

Mustard Oil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy