—প্রতীকী চিত্র।
মাটির উনুনে কাঠ গুঁজে বৃহস্পতিবার দুপুরে তরকারি চাপিয়েছিলেন রুমা কোঁড়া। উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস সংযোগ থাকলেও গুটিয়ে রাখা। কারণ, অভাবী পরিবার গ্যাসের দামে পেরে ওঠে না।
কয়েক মাস পরে লোকসভা ভোট। এই আবহে রাখিবন্ধনের সময় সিলিন্ডারপিছু দাম ২০০ টাকা কমেছে। এ বার উজ্জ্বলায় সিলিন্ডারপিছু আরও ১০০ টাকা ভর্তুকি যোগ হল। এত দিন ভর্তুকি ছিল দু’শো টাকা। তা বেড়ে ৩০০ টাকা হল। নগদ টাকায়
সিলিন্ডার কিনলে ভর্তুকির ওই টাকা ঢুকবে উজ্জ্বলার গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। গরিব মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দিতেই এই পরিকল্পনা,
দাবি কেন্দ্রের।
এতে অবশ্য হুগলির পান্ডুয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা রুমার চোখমুখ উজ্জ্বল হয় না। দিনমজুর মহিলা জানান, এমনিতেই গ্যাসে সব রান্না করেন না। গ্যাস বাঁচানোর জন্য বেশির ভাগ রান্নাই করেন মাটির উনুনে। বর্ষায় দিনমজুরি বন্ধ। তাই উজ্জ্বলা গুটিয়েই রেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন দিনমজুরি বন্ধ। গ্যাস সিলিন্ডার কেনার ৯৩২ টাকা পাব কোথায়! কিনলে তবে তো ভর্তুকি!’’ সামনে পুজো। এই পরিস্থিতিতে রান্নার গ্যাস তাঁদের কাছে বিলাসিতার সামিল, হুগলি জেলার অনেক পরিবারেরই এমন বক্তব্য। বহু পরিবার আছে, যারা গ্যাস ব্যবহার করে নিতান্ত প্রয়োজনে।
বৈঁচির বেড়েলার বধূ সুজাতা বাগ বলেন, ‘‘এত দাম দিয়ে গ্যাস গত মাসে তুলতে পারিনি। কাঠ বা গুল কয়লা দিয়েই রান্না করছি। একশো দিনের কাজ নেই। বৃষ্টিতে দিনমজুরিও বন্ধ। গ্যাস কেনার টাকা কোথায়!’’ পান্ডুয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী একটি সংস্থার খবর, উজ্জ্বলা যোজনায় তাদের গ্রাহক ১৯ হাজারের বেশি।
কয়েক মাস উজ্জ্বলার গ্যাস ব্যবহার করেই তুলে রেখেছেন জিরাট পঞ্চায়েতের কবুড়ার সোমবারী হেমব্রম। বছর বিয়াল্লিশের মহিলা এবং তাঁর স্বামী, দু’জনেই প্রতিবন্ধী। সংসার চলে প্রতিবন্ধী ভাতায়, খুঁড়িয়ে। রেশনের চাল, আটা পান। সোমবারী জানান, টাকার অভাবেই গ্যাসে রান্না ছেড়ে কাঠকুঠোর ভরসায় ফিরেছেন। বিল মেটাতে না-পারায় বিদ্যুৎ কাটা গিয়েছে পাঁচ বছর আগে। তাঁদের ছেলে পূর্ব বর্ধমানের একটি আশ্রমে থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবারীর কথায়, ‘‘ওই টাকা ভর্তুকি পেলেও আমরা পেরে উঠব না। সিলিন্ডারের দাম ৫০০-৬০০ টাকা হলে ভাতার টাকা জমিয়ে তাও বছরে একটা-দু’টো কিনতে পারতাম!’’
তবে, ভর্তুকি বাড়ায় সুবিধার কথাও বলছেন অনেকে। গোঘাটের শ্রীপুর আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা, দিনমজুর মিতা কিস্কু জানান, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে বা চাষাবাদের সময় কাজ থেকে ফিরে দ্রুত রান্না করতে তাঁরা গ্যাস ব্যবহার করেন। বাকি দিন খড়, শুকনো পাতা ইত্যাদি। ভর্তুকি কিছুটা বাড়লেও এ ভাবেই চালাবেন। তবে অল্প হলেও সাশ্রয় হবে। সেটাই লাভ।
খানাকুলের বাড়নন্দনপুরের বধূ অণিমা দ্বারী বলছেন, গ্রামে জ্বালানির অভাব না-থাকলেও ধোঁয়াহীন স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার জন্য উজ্জ্বলা নিয়েছিলেন। সিলিন্ডারপিছু দাম ১১০০ টাকা ছাড়ানোর পরে বন্ধ করে দেন। ২০০ টাকা ভর্তুকি পেতে ফের নেওয়া শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে মতলবেই আরও ১০০ টাকা
ভর্তুকি দিক, ভালই। বছরে দু’টো সিলিন্ডার নিই। আরও একটা বেশি নেওয়া যাবে। ভোট মিটলে যদি ভর্তুকি তুলে নেয়, ফের গ্যাস নেওয়া বন্ধ করে দেব। সরাকারি এমন ছক তো আমাদের চেনা!’’
হাওড়ার সাঁকরাইলের মানিকপুরের বাসিন্দা রঞ্জনা যাদবের স্বামী কারখানার শ্রমিক। রঞ্জনা
জানান, ধাপে ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ায় সমস্যা হচ্ছিল। ভর্তুকি বাড়ায় সুবিধা হবে। অপর্ণা অধিকারী নামে উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়ার এক বধূরও একই বক্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy