প্রায় ২৪ থেকে ২৭ মাস সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয় এই মুক্তোগুলি। নিজস্ব চিত্র
এ বার সমুদ্র থেকে দূরেও মুক্তো চাষ। বাংলার গ্রামেই। তবে গোল মুক্তো নয়, এর পোশাকি নাম ‘ডিজাইনার পার্ল’ বা ‘ইমেজ পার্ল’। ২০১৮ সাল থেকে সরকারি প্রকল্পের অধীনে হুগলি জেলার ডুমুরদহ-টাকিপাড়া এলাকার পুকুরের মিষ্টি জলে মুক্তো চাষ করে চলেছেন স্থানীয় মহিলারা। ওড়িশার বালেশ্বর থেকে তাঁরা মুক্তো চাষ করার এই অভিনব পদ্ধতি শিখে এসেছিলেন। এই সব মুক্তোর কোনওটি অশোক স্তম্ভের আকারের, কোনও মুক্তোয় দুর্গার মুখ, গণেশ ঠাকুর, হাতি-সহ নানা অবয়বের। আপাতত ৭ থেকে ১০ জন মহিলা কাজ করেন এই প্রকল্পে। টাকিপাড়া এলাকার পুরুষ সদস্যেরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন এই কাজে।
ঝিনুকের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই সেই মুক্তো সোজা চলে যাচ্ছে রাজস্থান, সুরত-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেখানে ঝিনুক কেটে মুক্তো বের করে ভাল মতো পালিশ করার পর তৈরি হচ্ছে মুক্তোর গয়না। গ্রাম প্রতি ২০০-২৫০ টাকায় এই ঝিনুকগুলি পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়। যে পুকুরগুলির মধ্যে মুক্তো চাষ করা হচ্ছে, সেখানে আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ হয়। ফলে মুক্তো চাষের জন্য আলাদা করে খুব বেশি খরচ হয় না।
ঝিনুক সংগ্রহ করে তাতে অস্ত্রোপচার করে দু’তিন রকমের রাসায়নিক মিশ্রণ মিশিয়ে বিভিন্ন ছাঁচে ফেলা হয়। এর পর সেই ছাঁচের মধ্যে নিউক্লিয়াস ঢুকিয়ে তা সাত দিন ধরে ওষুধ মেশানো জলের মধ্যে রাখা হয়। শেষে প্লাস্টিকের খাঁচার মধ্যে ঝিনুকগুলো ভরে পুকুরের জলে নামিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত, এই প্রক্রিয়ায় মুক্তো তৈরি হতে ১৪-১৬ মাস সময় লাগার কথা। যে হেতু ওই এলাকায় চাষ করার জায়গা কম, তাই প্রায় ২৪ থেকে ২৭ মাস সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয় এই মুক্তোগুলি।
এই প্রকল্প বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে গ্রামের মহিলারা অনেকটাই স্বনির্ভর হতে পারবেন বলে মনে করছেন মুক্তো চাষে যুক্ত সংস্থার সদস্যরা। ডুমুরদহ ফিশারম্যান কো-অপারেটিভ সংস্থায় কর্মরতা আল্পনা বিশ্বাস জানান, ‘‘আমরা খুবই খুশি নতুন ধরনের কিছু কাজ করতে পেরে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর থেকেই এখানে মুক্তো চাষ করছি। আমাদের দেখে আরও অনেক মহিলা উৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা তাঁদেরকেও কাজ শেখাচ্ছি।’’ নেচার এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি-র প্রতিনিধি অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে এই মুক্তো চাষ হচ্ছে। তবে প্রথাগত মুক্তো যেমন হয়, এই মুক্তোগুলো সে রকম নয়। ইমেজ পার্লের চাহিদা খুব বেশি।’’ গ্রামের মহিলাদের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy