কেক তৈরীর ভাটি। কেক প্রস্তুতে ব্যস্ত কারিগরেরা। ব্যান্ডেলে।
বড়দিন মানেই হরেক কেক। এ সময়ে চরম ব্যস্ততা থাকে বেকারি শিল্পে। কিন্তু এই শিল্প অনেকাংশেই যন্ত্র (বৈদ্যুতিক ওভেন) নির্ভর হয়ে যাওয়ায় কমছে সাবেক ‘ভাটি’ (কংক্রিট বা লোহার বিশেষ ধরনের হিট চেম্বার)। ফলে, সেখানকার কেক-কারিগররা কাজ হারাচ্ছেন। বড়দিনে তাঁদের হতাশা বাড়ছে। সেই তালিকায় হাওড়া, বর্ধমানের মতোই আরামবাগেরও বহু কারিগর রয়েছেন।
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের দাবি, বৈদ্যুতিক ওভেনে ভাটির তুলনায় বেশি কেক কম সময়ে তৈরি করা যায়। কারিগরও কম লাগে। তাই ওভেনের কদর বাড়ছে। অবশ্য একই সঙ্গে তাঁরা স্বীকার করছেন, ভাটির কেকের স্বাদ-গন্ধ পুরো অন্যরকম। তেঁতুল কাঠের আঁচে কেক শুকোনো হয়। তার আগে কারিগররা পুরো কাজ নিজেদের হাতে করেন। যন্ত্রে সেই সুযোগ মেলে না।
৫০ বছরেরও বেশি পুরনো ব্যান্ডেলের একটি বেকারিতে আজও ভাটিতে কেক হয়। মালিক প্রদীপ আগরওয়াল জানান, সারা বছর ১৫ জনের মতো কারিগর থাকেন। ডিসেম্বরে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ জনকে নেওয়া হয়। যাঁদের কেউ আসেন আরামবাগ থেকে, কেউ হাওড়া থেকে। বছরের অন্যান্য সময়ে তাঁরা চাষাবাদ কিংবা দিনমজুরি করেন। তাঁদেরই একজন নমি বাগদি। তিনি বলেন, "এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এক মাসে আয় ভালই হয়। কিন্তু এখন কাজের সুযোগ কমছে। কারণ ভাটি কমছে। আমার দশ জন বন্ধু গত বছর কাজ পেয়েছিল। এ বার পায়নি।’’
প্রদীপ জানান, সমস্যা শুধু বৈদ্যুতিক ওভেন আসার জন্যই নয়, ভাটিতে কাঠের জোগানও দিন দিন কমছে। কেজিপ্রতি কাঠ প্রায় ১২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরকার এখনই ভাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলেও দূষণের ব্যাপার তো রয়েইছে। তাই কতদিন ভাটি রাখতে পারবেন, তা নিয়ে তিনি সংশয়েও রয়েছেন।
শুধু ব্যান্ডেল নয়, হুগলির প্রায় প্রতিটি ব্লকেই কমবেশি বেকারি কারখানা রয়েছে। কোনওটা স্বাধীনতার আগে, আবার কোনওটা স্বাধীনোত্তর ভারতে গড়ে উঠেছে৷ ব্যান্ডেল স্টেশন লাগোয়া কুলিপাড়া, চুঁচুড়ার খাগড়াজোল, ত্রিবেণীর শিবপুর, চাঁপদানি প্রভৃতি এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু পুরনো বেকারি। ব্যান্ডেলের একটি নামী পুরনো বেকারি কারখানার মালিক পোলবার রাজহাটে আধুনিক বেকারি কারখানা গড়েছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেখানে সারা বছর রুটি, বিস্কুটের পাশাপাশি কেক তৈরি হয়। তবে, ডিসেম্বরে কেকের উৎপাদন বাড়ে। এই কারখানা খুব বেশি পুরনো নয়। তবে, মালিকের বাড়ির বেকারি বহু পুরনো। সেখানে একসময়ে ভাটিতে কেক তৈরি হত। ডিসেম্বরে নানা জেলা থেকে কিছুটা বেশি রোজগারের আশায় কারিগররা আসতেন। কিন্তু এখন পুরোটাই যন্ত্রচালিত। তাই বছরভর থাকা শ'খানেক কারিগরই যথেষ্ট। ডিসেম্বরে নতুন কাউকে নেওয়া হয় না।
কারখানার পক্ষে শরিফ আলি জানান, কারখানায় যত পরিমাণ কেক তৈরি হয়, তা ভাটিতে করতে গেলে কারিগরের সংখ্যা অনেকটাই বাড়াতে হত। ডিসেম্বরে রুটি, বিস্কুটের উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে কেকের উৎপাদন বাড়ানো হয়, তাই অতিরিক্ত কারিগরও লাগে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy