Advertisement
E-Paper

হাওড়া স্টেশনকে ইউনেস্কো-তালিকায় সংযোজনের উদ্যোগ

দেশের প্রাচীনতম স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও জোড়া বিপত্তিতে প্রথম রেলগাড়ি ছোটার গৌরব হাতছাড়া হয়েছিল হাওড়ার। বাষ্পচালিত ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ কলকাতা বন্দরের পরিবর্তে পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়।

হাওড়া স্টেশন।

হাওড়া স্টেশন। —ফাইল চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৫৯
Share
Save

চলতি মাসে দেশের প্রাচীনতম রেলস্টেশন হিসাবে ১৭০ বছরে পা দেবে হাওড়া স্টেশন। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসের মূল ভবন এবং চার্চ গেট স্টেশন চত্বর তাদের প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় ঠাঁই পেলেও হাওড়া স্টেশনের এই স্বীকৃতি জোটেনি। যদিও প্রাচীনত্বের বিচারে এগিয়ে হাওড়াই।

তবে, দেশের প্রাচীনতম স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও জোড়া বিপত্তিতে প্রথম রেলগাড়ি ছোটার গৌরব হাতছাড়া হয়েছিল হাওড়ার। বাষ্পচালিত ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ কলকাতা বন্দরের পরিবর্তে পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। ‘কেডিগ্রি’ নামের সেই জাহাজকে ১৮৫৪ সাল নাগাদ যখন কলকাতায় ফেরানো হয়, তত দিনে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেকটা। এইচএমএস গুডউইন নামের যে জাহাজে ট্রেনের কোচ আসছিল, হুগলি নদীর মোহনায় বালুচরের কাছে তা ডুবে যায়। যদিও কলকাতার যমজ শহর হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত রেল চলাচলের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তার প্রায় এক দশক আগেই।

রানিগঞ্জ এবং রাজমহল পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় খনি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথের। কয়লা দ্রুত আনার পথ খুঁজছিলেন তিনি। ১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ট্রেনে চড়েই এ দেশে রেল চালুর ভাবনা আসে তাঁর। প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশ খরচ দিয়ে ইংরেজ সংস্থার সাহায্যে রেলপথ তৈরির চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু, ইংরেজদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গ্রেট ওয়েস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি তৈরি করে নিজেই কাজে নেমে পড়েন। ১৮৪৬ সালে বিভিন্ন অনুমতি জোগাড়ের কাজে বিলেতে গিয়ে দ্বারকানাথের মৃত্যু হলে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানির সঙ্গে মিশে যায় তাঁর সংস্থা। সেই সংস্থার তত্ত্বাবধানেই শুরু হয় রেলপথ নির্মাণ। শুরু থেকেই যার দায়িত্বে ছিলেন জর্জ টার্নবুল। পরে তাঁর পরিকল্পনায় তৈরি হয় শুরুর দিকের একটি লাইনের হাওড়া স্টেশন।

হাওড়া স্টেশনকে হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার তৎপরতা শুরুর নির্দেশ ২০১৮ সালেই দিয়েছিল রেল বোর্ড। বিষয়টি অতিমারি পরিস্থিতিতে থমকে যায়।

হাওড়া স্টেশনের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে স্টেশনের ডিআরএম ভবন এবং মূল ভবনকে ফের ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হাওড়া স্টেশন নিয়ে রেল বোর্ডের আগ্রহের কথা মনে করিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব রেলকে চিঠি দেন রেল বোর্ডের প্রাক্তন অর্থ কমিশনার ও ‘রেল এন্থিউসিয়াস্ট সোসাইটি’র পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের প্রধান সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।

চিঠি পাওয়ার পরে এ নিয়ে উৎসাহ দেখান হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার। তাঁর আগ্রহেই ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় হাওড়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরতে খোঁজ শুরু হয়েছে। হাওড়া থেকে রেলের প্রতিনিধি মুম্বই ঘুরে এসেছেন। ঐতিহাসিক ভবন বা স্মারক ইউনেস্কো তালিকায় হেরিটেজ হিসাবে ঠাঁই পেতে হলে তার প্রাচীন বিশেষত্ব অক্ষত থাকা জরুরি। তা ভেবেই হাওড়ার ডিআরএম ভবনের প্রাচীনত্ব প্রমাণের দস্তাবেজ খোঁজা শুরু হয়েছে।

স্টেশনের এখনকার মূল ভবন ব্রিটিশ স্থপতি হ্যালসে রিকার্ডোর পরিকল্পনায় তৈরি। ১৯০৫ সালে তাঁর পরিকল্পনায় ছ’টি প্ল্যাটফর্ম-সহ মূল ভবন তৈরি হয়। রোমান এবং মুর স্থাপত্যের মিশেলে তৈরি বড় বড় খিলান, প্রশস্ত বারান্দা, অর্ধচন্দ্রাকৃতি গম্বুজ ওই ভবনের বিশেষত্ব। নির্মাণশৈলীতে গুম্ফার সঙ্গে মিল আছে। ১৯৮৪ সালে হাওড়া স্টেশনে আরও আটটি প্ল্যাটফর্ম হয়। ১৯৯২ সালে নতুন টার্মিনাল কমপ্লেক্স তৈরি হয়। ২০০৯ সালে প্ল্যাটফর্ম সংখ্যা হয় ২৩টি।

রেল সূত্রের খবর, পুরনো নথি খুঁজে বার করে দেশে রেল পরিষেবা শুরুর ওই সব উদ্যোগের কথা জানিয়েই স্টেশনের মূল ভবন ও প্রাচীন ডিআরএম ভবনকে ইউনেস্কো হেরিটেজ তালিকায় তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় এ রাজ্যের শান্তিনিকেতনের ঠাঁই হয়েছে। সারা ভারতে এখন ৪৩টি দ্রষ্টব্য স্থায়ী তালিকায় এবং ৫৭টি দ্রষ্টব্য ইউনেস্কোর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Station UNESCO

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}