বাইকে চেপে এসে হার, দুল ছিনিয়েই চম্পট দিচ্ছে ছিনতাইকারীরা!
নিশানা মূলত মহিলা প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। ৩-৪ দিন ধরে রেইকি, তার পর সুযোগ বুঝে কোপ! বাইকে চেপে এসে হার, দুল ছিনিয়েই চম্পট দিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় দুষ্কৃতীদের এই দৌরাত্ম্য প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। তবে শুধু হাওড়া নয়, কলকাতা, রাজারহাট, নিউটাউন এবং হুগলিতেও জাল বিস্তার করেছে ছিনতাইকারীরা। সম্প্রতি এক পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রীর হার চুরি যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তবে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ছিনতাই চক্রকে ধরতে তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘অপরাধে ব্যবহৃত একটি গাড়ি আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। দ্রুত গোটা গ্যাংটাকেই আমরা ধরে ফেলব। তদন্ত প্রায় গুটিয়ে আনার মুখে।’’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ছিনতাইবাজদের দাপটে আতঙ্কিত হাওড়ার চ্যাটার্জি হাট, জগাছা, শিবপুর-সহ বিভিন্ন থানা এলাকার প্রাতর্ভ্রমণকারী মহিলারা। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন অভিজাত এলাকার পার্ক ও গলির মোড়কে ঘাপটি মেরে থাকছে ছিনতাইকারীরা। কাকভোরে তারা সক্রিয় হয়। যখন রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকে। বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নীল রঙের বাইকে করে এসে আচমকা গলার হারে টান দিচ্ছে বাইকের পিছনে বসা ব্যক্তি। গলার হার ছিঁড়ে যতটুকু হাতে আসছে, তা-ই নিয়ে চম্পট দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। হুগলির ডানকুনি থানার এক পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রীর গলার হারও একই কায়দায় চুরি গিয়েছে। বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তাঁর গলার হার ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার মালিকপাড়ার বাসিন্দা জুহি ভাদুরি বলেনও, ‘‘প্রতি দিন স্বামীর সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোই। সেই দিন একাই বেরিয়েছিলাম। ড্রেনেজ ক্যানাল রোড ধরে হাঁটার সময় তিন জন একটা বাইকে চেপে এসে আমার হার ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। ভীষণই আতঙ্কিত আমরা।’’
রোজ সকালে পাড়ার মোড়ে ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে আসেন শিবপুর এলাকার বাসিন্দা শম্পা চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার মধ্যে এই রকম কোনও দিন ঘটেনি। আমরা খুব আতঙ্কিত।’’
ছিনতাইয়ের ঘটনার শিকার হাওড়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পাড়ার গলির মুখে আসতেই একটি মোটরবাইক হঠাৎ আমার কাছে চলে আসে। বাইকে দু’জন ছিল। এক জন আচমকা আমার গলার হারে টান মারে। হারটি গলায় ছিঁড়ে যেতেই আমি এক হাত দিয়ে সেটি চেপে ধরি। হারের একটি অংশ আমার হাতে রয়ে যায়। বেশির ভাগটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।’’ তবে ছিনতাইকারীদের হাতে কোনও বন্দুক ছিল না বলেই দাবি করেছেন ওই মহিলা।
তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, অপরাধের ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে, ছিনতাইবাজদের একটি চক্রই এই কাজ করে বেড়াচ্ছে। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছিনতাই করছে তারা। কখনও কলকাতার কোনও পার্কে, কখনও আবার রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায়। তবে অপরাধের সূত্রপাত হাওড়া থেকেই। হাওড়া সিটি পুলিশের ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, ছিনতাইবাজেরা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় প্রাথমিক ভাবে তদন্তে সমস্যা হলেও জাল অনেক দূর পর্যন্ত গুটিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ওই নীল বাইকটি চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাইকের মালিক হাফিজুর রহমানকে। তিনি হাওড়ার শিবপুর কাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
শনিবার হাফিজুরকে হাওড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী তারাগতি ঘটক বলেন, ‘‘একটা গ্যাং হাওড়া ও অন্যান্য এলাকায় ছিনতাই করে চলেছে মাসখানেক ধরে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে হাফিজুর রহমান নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে চ্যাটার্জি হাট থানার পুলিশ। শনিবার তাঁকে হাওড়া আদালতে হাজির করিয়ে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হয়। ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনও পলাতক। তা ছাড়া ছিনতাই হওয়া হার, দুল ইত্যাদি উদ্ধার হওয়া দরকার। ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্যই ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। এই আবেদনের ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধৃতের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’
হাওড়া পুলিশ সূত্রে খবর, লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ধৃতকে। জেরার মুখে তিনি তদন্তকারীদের জানান, তাঁর বন্ধুরা মাঝেমধ্যে বাইক নিয়ে যেতেন। ফেরত দিতেন দু’তিন দিন পর। কিন্তু কী কারণে তাঁরা বাইক নিতেন, সে বিষয়ে কিছু জানেন না হাফিজুল। তাঁর আরও বেশ কিছু বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় তাঁকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাচ্ছে না বলেই জানিয়েছে সূত্র।
তবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।’’ শীঘ্রই তাঁদের গ্রেফতার করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে সিপি বলেন, ‘‘একটা গ্যাং-ই নানা জায়গায় ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। তাদের সন্ধানে নানা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছি। শীঘ্রই গোটা গ্যাংটাকেই ধরা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy