Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Murders

Howrah Murders: ‘পল্লবীই খুন করেছে চার জনকে, আমাকে মেরে তাড়িয়েছে’, হাওড়ার হত্যাকাণ্ডে দাবি স্বামীর

গত ১০ অগস্ট হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন এম সি ঘোষ লেনের ঘোষবাড়িতে পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনা ঘটে।

পল্লবী ঘোষ

পল্লবী ঘোষ ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ২০:৪১
Share: Save:

খুনের রাতে স্ত্রী পল্লবী ঘোষকে কাটারি হাতে হিংস্র হয়ে উঠতে দেখে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী তাঁকেও মারধর করেন। হুমকি দেন। স্ত্রীর মারে বাধ্য হয়ে শেষমেশ বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে পুলিশি জেরায় দাবি করলেন ধৃত স্বামী দেবরাজ ঘোষ। ঘটনার রাতেই গ্রেফতার হন তাঁর স্ত্রী পল্লবী। তার ন’দিন পর শুক্রবার ভোরে দেবরাজকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে শুক্রবারই হাওড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, দেবরাজ ও পল্লবী দু’জনে মিলেই পরিবারের চার জনকে খুন করেছেন। কিন্তু হাওড়ার সেই ঘোষ পরিবারের ছোট ছেলে দেবরাজের দাবি, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে থাকলেও চারটি খুন তাঁর স্ত্রীই করেছেন। খুন করার সময় পল্লবী তাঁকেও মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

গত ১০ অগস্ট হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন এম সি ঘোষ লেনের ওই ঘোষ বাড়িতে পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনা ঘটে। ওই বাড়ির বড় ছেলে দেবাশিস ঘোষ (৩৬), মা মাধবী ঘোষ (৫৬), দেবরাজের স্ত্রী রেখা ঘোষ (৩০) ও ১৩ বছরের মেয়ে তিয়াসাকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশি জেরায় পল্লবী দাবি করেছেন, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ তো ছিলই, তা ছাড়াও নানা কারণে ভাশুরের পরিবারের উপর রাগ একত্রিত হয়ে প্রবল আক্রোশে খুন করেছেন তিনি।

পল্লবীকে জেরা করে জানা যায়, ঘটনার রাতে বাড়ি থেকে চম্পট দেন দেবরাজ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পল্লবী-সহ পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও দেবরাজের খোঁজ না মেলায় হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। গোপন সূত্রেও খবর মেলে, হাওড়া থেকে পালিয়ে আসার পর থেকে বর্ধমান জেলার বিভিন্ন রেল স্টেশনে রাত কাটাচ্ছিলেন দেবরাজ। সেই মতো নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে কাটোয়া স্টেশনে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় তদন্তকারীদের দেবরাজ জানান, অল্পেতেই মাথাগরম করা এবং রাগে ‘উন্মত্ত’ হয়ে ওঠার প্রবণতা রয়েছে পল্লবীর। সেই রাতেও তা-ই ঘটেছিল। দাদার পরিবারের সঙ্গে সামান্য ঝামেলায় পল্লবী হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন। ধৃত স্বামীর দাবি, তাঁকেও লাথি মারেন পল্লবী। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। বাড়ি ছেড়ে পালাতে বলে পল্লবী প্রাণে মারার হুমকিও দেন। স্ত্রীর ওই রূপ দেখে ভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে জানান দেবরাজ।

জেরায় পল্লবী আগেই দাবি করেছেন, বিয়ের পর থেকেই ভাশুর দেবাশিস তাঁকে কুপ্রস্তাব দিতেন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেও জড়াতে চাইতেন তিনি। কয়েক বার শ্লীলতাহানিরও শিকার হন। পল্লবীর অভিযোগ, থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কোনও কাজ হয়নি। বহু দিন ধরে এই ঘটনা ঘটতে থাকায় মানসিক ভাবেও অসুস্থ এবং অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় তাঁর শরীরে। অনেক রকমের ওষুধ খেতে হত তাঁকে। শুধু শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার বা ভাসুরের ‘কুনজর’ই নয়, সম্পত্তি নিয়েও অনেক দিন ধরে দেবরাজ-দেবাশিসের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। ঘটনার রাতেও তা নিয়ে ঝামেলা হয়।

পুলিশের কাছে দেবরাজ দাবি করেন, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিতেন দেবাশিস। তা নিয়ে রাগ তো ছিলই। ঘটনার রাতেও পল্লবীকে দু’হাজার টাকা দিতে চেয়ে নিজের ঘরে ডেকেছিলেন তাঁর দাদা। ঝামেলার সময় তাই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন স্ত্রী। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, দীর্ঘ দিন ধরে রাগ জমতে জমতে ঘটনার রাতে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যদিও পল্লবী দাবি করেন, কাউকে খুন করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। ভয় দেখাতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু রাগের মাথায় আর নিজেকে সামলাতে পারেননি।

রেগে গিয়ে পল্লবীর এ ভাবে হিংস্র হয়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত দাস বলেন, ‘‘এটাকে সাডেন এক্সপ্লোসিভ বিহেভিয়ার বলে। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। ওঁর একটা মানসিক সমস্যা ছিল। ওঁকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিতে পারেননি। ভাশুর কুপ্রস্তাব দিতেন। সব মিলিয়ে ওই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে খুন করার ঘটনা খুব কম সময়েই ঘটে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murders Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy