Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Howrah

Howrah Murder: পল্লবীর মানসিক সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত মায়ের

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পল্লবীর পড়াশোনা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। ১০ বছর আগেই তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দাদা ডাব বিক্রেতা।

পল্লবী ঘোষ

পল্লবী ঘোষ নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২২ ০৬:১৭
Share: Save:

‘‘ছোটবেলায় মাথায় সিলিং ফ্যান খুলে পড়েছিল। খুব জোরে আঘাত লেগেছিল। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। বড় হওয়ার পরে দেখেছি, রেগে গেলে মেয়েটার মাথার ঠিক থাকত না। ভাঙচুর-মারধর করত। ওই রকম সময়ে ও যে কী করে, নিজেই বুঝতে পারে না। অসুস্থ বলেই মেয়েটা চার জনকে এ ভাবে মেরে ফেলতে পেরেছে।’’— কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন সত্তরোর্ধ্বা মিনু রায়। হাওড়ার এম সি ঘোষ লেনে পরিবারের চার জনকে কুপিয়ে খুনে ধৃত পল্লবী ঘোষের মা।

বৃদ্ধা জানান, মেয়ের আসল নাম পল্লবী নয়। তার নাম পূর্ণিমা। দেবরাজ ঘোষ তার দ্বিতীয় স্বামী। পরিবার সূত্রের খবর, পল্লবীর প্রথম বিয়ে হয়েছিল বাদামতলার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে। সেই শাশুড়িই পূর্ণিমার নাম পাল্টে রেখেছিলেন পল্লবী।সেই নামই এখনও ব্যবহার করে পূর্ণিমা। তবে বিয়েটা বেশি দিন টেকেনি। শ্বশুরবাড়িতে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলমাল করায় স্বামী তাঁকে মা-বাবার কাছে রেখে চলে গিয়েছিলেন। ফিরে যায়নি পল্লবীও।

এর পরেই এম সি ঘোষ লেনের বাসিন্দা দেবরাজের সঙ্গে পল্লবীর পরিচয় হয় ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে। সেখানেই শারীরচর্চা করার সময়ে আলাপ দু’জনের। সেই থেকে প্রেম। তার পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে পল্লবী। হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটে নিজের দু’কামরার টালির চালের ঠিকানায় বসে শনিবার বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় ওই আঘাত লাগার কারণে এখন ওর মাথার শিরা শুকিয়ে যাচ্ছে। দেবরাজের সঙ্গে বিয়ের পরে মাথার চিকিৎসা করাতে তিন বার চেন্নাইয়েও গিয়েছিল। তবুও কোনও লাভ হয়নি।’’

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পল্লবীর পড়াশোনা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। ১০ বছর আগেই তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দাদা ডাব বিক্রেতা। তাঁর আয়েই সংসার চলে। টালির চালের ঘরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধা জানালেন, গত এক মাস ধরে পল্লবী তাঁকে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখেছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাঁকে চ্যাটার্জিহাটের বাড়িতে রেখে দিয়ে যায়। এর পরদিনই মেয়ে-জামাইয়ের হাতে পরিবারের চার জনের খুন হওয়ার কথা জানতে পারেন তিনি। তার পর থেকে প্রায় শয্যাশায়ী বৃদ্ধা। ধরা গলায় বলে চলেন, ‘‘ওর শ্বশুরবাড়িতে যখন এক মাস ছিলাম, তখন রোজই ভাশুরের পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া-গোলমাল লেগে থাকত। রেগে গেলে ওর হুঁশ থাকে না। ওই সময়ে স্বামীকেও মারধর করত। তখন ও অন্য মানুষ। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিছুই হয়নি। আর এখন তো সব শেষ।’’

আপাতত বৃদ্ধার দুশ্চিন্তা এক জনকে ঘিরেই। সাত বছরের নাতি রুদ্রনীল। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘নাতিটা নিজে কিছুই করতে পারে না। স্নান থেকে খাওয়াদাওয়া, সবই করিয়ে দিতে হয়। ওর জন্যই এক মাস ওই বাড়িতে ছিলাম। আমিই সব করিয়ে দিতাম। এখন ছেলেটা কোথায় আছে, কেমন আছে, কে জানে!’’ দিদিমাকে আর বলে আসা হল না, মা-বাবার কৃতকর্মের জন্য বালক রুদ্রনীলের আপাতত ঠাঁই হয়েছে হোমে।

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy