Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Biswakarma Puja

বিশ্বকর্মা পুজোয় হুগলি শিল্পাঞ্চল বিবর্ণই রইল

কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হত যে বঙ্গলক্ষ্মীতে, সেই মিল ২০০৩ সালে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়। কাছেই রামপুরিয়া মিলেরও একই পরিণতি হয়।

 বৈঁচীর একটি বিশ্বকর্মা পুজো  নিজস্ব চিত্র

বৈঁচীর একটি বিশ্বকর্মা পুজো নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:২৬
Share: Save:

আরও একটা বিশ্বকর্মা পুজো চলে গেল শনিবার। হুগলি শিল্পাঞ্চলের বিবর্ণ চেহারার বদল হল না।

বন্ধ গোন্দলপাড়া জুটমিল খোলার দাবিতে শুক্রবার, পুজোর আগের দিন চন্দননগরে পথে নেমেছিল নাগরিক সমাজ। ওয়েলিংটন জুটমিল খোলার নামগন্ধ নেই। হিন্দমোটর, ডানলপের যন্ত্রপাতিতে মরচে বেড়েছে।

অথচ, গঙ্গাপাড়ের শিল্পাঞ্চল একসময়ে সোনা ফলাত। অজস্র শ্রমিকের ঠিকানা এ তল্লাট। বিশ্বকর্মা পুজোয় শ্রীরামপুর, রিষড়া, চন্দননগর, কুন্তীঘাট— সর্বত্র আলো ঝলমল করত কল-কারখানা। আজ তার অনেক বন্ধ। কোনও কারখানা চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে।

আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক তথা কলেজ-শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, বিলেতি দ্রব্য বর্জন ও স্বদেশি গ্রহণ আন্দোলনের ফলে ১৯০৬ সালে শ্রীরামপুরে তৈরি হয় দেশি কাপড়কল ‘বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল’। ততদিনে লৌহনির্মিত কলে ইংরেজের তৈরি পোশাক ছেয়ে গিয়েছে। উদ্যোগপতি বাঙালি স্বদেশি দলের তৈরি বঙ্গলক্ষীর ব্যবসায় কো‌ণঠাসা হয় ইংরেজ। রজনীকান্ত সেন গান বাঁধেন, ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই…’।

কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হত যে বঙ্গলক্ষ্মীতে, সেই মিল ২০০৩ সালে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়। কাছেই রামপুরিয়া মিলেরও একই পরিণতি হয়। দুই মিলেই বিশ্বকর্মা কার্যত দুর্গাপুজোর আনন্দ বয়ে আনত শ্রমিক পরিবারে। এখন চুল্লির বদলে আকাশ ঢেকেছে ইমারত।

মাহেশের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব শীতলপ্রসাদ দীঘল বলেন, ‘‘বাবা বঙ্গলক্ষ্মীতে কাজ করতেন। বিশ্বকর্মা পুজো হইহই করে হত। বাবার হাত ধরে যেতাম। লাড্ডু দিত। পরে ওখানেই সুপারভাইজ়ার হই। বিভিন্ন বিভাগে আলাদা পুজো হত। নতুন জামাকাপড়, মিষ্টিমুখ— সব মিলিয়ে একটা ব্যাপার ছিল। আজ মিলটাই নেই।’’ রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা তরুণকান্তি চৌধুরীও ছেলেবেলায় ফিরে যান। বলেন, ‘‘বাবা বঙ্গলক্ষ্মীতে কাজ করতেন। বিশ্বকর্মা পুজোয় মিল থেকে লাড্ডু আনতেন। জব্বর স্বাদ। দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। এ তল্লাটে বিশ্বকর্মা পুজোর সেই জৌলুসটাই উধাও।’’

সব জায়গাতেই চালু কল-কারখানায় এ দিন পুজো হয়েছে। তবে, সেই প্রাণ সর্বত্র ছিল না। ডানকুনিতে দিল্লি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কারখানায় পুজোয় আয়োজন আহামরি ছিল না। সর্বত্র দুপুরে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। হাতেগোনা কিছু কারখানা আলো দিয়ে সাজানো হয়। শ্রমিকদের একাংশ বলছেন, শিল্পাঞ্চলের বেহাল অবস্থা সার্বিক আয়োজনে স্পষ্ট।

মাস দুয়েক আগে হিন্দমোটর কারখানা চত্বরে টিটাগড় ওয়াগন লিমিটেডে মেট্রো রেলের কোচ উদ্বোধনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কারখানার সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় বাড়তি জমির সংস্থানের পাশাপাশি হিন্দমোটরের চৌহদ্দিতেই নতুন দু’টি শিল্পের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ এখনও কারও চোখে পড়েনি। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী বিজেপি থেকে বন্ধ হিন্দমোটরের শ্রমিকেরা।

ভারতের প্রথম মোটরগাড়ি কারখানা উত্তরপাড়ার হিন্দুস্থান মোটরস ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ। সেখানকার শ্রমিক আবাসনে সাড়ে তিনশো শ্রমিক থাকেন। এ দিন কারখানার রমরমা এবং বিশ্বকর্মা পুজোর ফেলে আসা সময়ের স্মৃতিচারণ করলেন তাঁরা। কারখানা খোলার আর্তি জানালেন। রাজকুমার সাউ বলেন, ‘‘অন্য কারখানায় বদলি শ্রমিক হিসাবে কাজ করে কোনওক্রমে চলছে। কারখানা খুলুক। আমরা কাজ ফিরে পাই।’’

বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এসে অনেক আশ্বাস দিলেন। তারপর সব চুপচাপ। হিন্দমোটর শ্মশান হয়ে গিয়েছে। কিছু তো করুন মুখ্যমন্ত্রী।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কিছু মানুষ সমালোচনা করবেনই। মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মানুষ ভাল কিছুরই আশা করে। প্রতিশ্রুতি রক্ষার নামই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Biswakarma Puja Baichi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE