Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hanna House Serampore

‘হান্না হাউস’ সংস্কারে হেরিটেজ কমিশনকে জানাবে প্রশাসন

জানা গিয়েছে, প্রাথমিকের তরফে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল ভবনটি ভাঙার অনুমতির জন্য।

ভেঙে ফেলার পরে হান্না হাউস ।।

ভেঙে ফেলার পরে হান্না হাউস ।। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৮
Share: Save:

ঐতিহ্যবাহী ‘হান্না হাউস’-এর একাংশ ভেঙে ফেলার ঘটনায় সোমবার তদন্তে নামল শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভা। সেটি কার নির্দেশে ভাঙা হচ্ছিল, তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার দাবিতে শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হল শ্রীরামপুর মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির তরফে। ‘হান্না হাউস’ এই বিদ্যালয় চত্বরেই। একই চৌহদ্দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও চলে।

সোমবার দেখা গেল, ভবনের ভেঙে ফেলা অংশের ইট ডাঁই হয়ে পড়ে। পাতলা ইটের নির্মাণ। মোটা দেওয়াল, ছাদে কড়ি-বরগা। দরজা, জানলা উধাও। মাঠে পড়ে বিম। পিছনে ছাদের অনেকটা অংশ ভাঙা। মদের ভাঙা বোতলও চোখে পড়ল। শিক্ষিকাদের দাবি, এক বছর আগেও ওই ছাদ ঠিক ছিল। ২০১৯ সালে শেষ ক্লাস হয়। প্রধান শিক্ষিকা সোনালি চক্রবর্তী-সহ অন্য শিক্ষিকা, স্কুলের সভাপতি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়— প্রত্যেকে এক বাক্যে জানান, ইতিহাস বিজড়িত ভবনটি গুঁড়িয়ে ফেলা হোক, তাঁরা চাননি। তাঁরা চান, প্রশাসনিক উদ্যোগে সংস্কার।

অনুসন্ধানে আসেন শ্রীরামপুর পুরসভার আধিকারিক পিন্টু দে। প্রশ্ন ওঠে, ভবন ভাঙার অনুমতি কে দিয়েছিলেন? পে-লোডার কে এনেছিলেন? সেটি ঢোকাতে গেট খুলেছিলেন কে? উচ্চ বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, প্রাথমিকের ভবনে কাজ চলার জন্য গত দু’মাস তারাই গেট খুলছে। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন কর তা মেনে নেন। পরে তিনি বলেন, তাঁদের স্কুলের ‘ওয়ার্ক এডুকেশন কমিটি’ ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে প্রস্তাবনা নিয়েছিল। তার পরেই আত্মীয়ার অসুস্থতার কথা বলে তিনি বেরিয়ে যান। দুপুরে মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব টিকাদার সরেজমিনে অনুসন্ধান করেন।

জানা গিয়েছে, প্রাথমিকের তরফে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল ভবনটি ভাঙার অনুমতির জন্য। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা সায় দেননি। তাঁরা ঠিক করেন, পরিস্থিতি দেখার আবেদন জানিয়ে পুরসভায় চিঠি দেবেন। চিঠি তৈরিও হয়। কিন্তু, তাদের অজ্ঞাতেই শনিবার ভাঙা শুরু হয়। স্কুলে এসে তা দেখেই প্রতিবাদ জানিয়ে কাজ বন্ধ করেন শিক্ষিকারা।

পে-লোডারে লেখা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, সেটি ডানকুনির। ফোন ধরে এক জন জানান, তাঁর এক বন্ধু যন্ত্রটি ভাড়া খাটাচ্ছিলেন। সেই বন্ধু জানান, জনৈক বাপন যন্ত্রটি ভাড়া করেছিলেন। বাপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ইতিহাস চর্চাকারীরা জানান, হান্না মার্শম্যান ভারতে আসা প্রথম মিশনারি মহিলা। ১৮০০ সাল থেকেই তিনি শ্রীরামপুরে মেয়েদের শিক্ষাপ্রসারে উদ্যোগী হন। ১৮১৮ সালে ভবনটি তাঁর হাত ধরে তৈরি হয় শ্রীরামপুর মিশন বালিকা বিদ্যালয় হিসাবে। ভারত তথা এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন বালিকা বিদ্যালয়। এ তল্লাটে মেয়েদের শিক্ষাপ্রসারে হান্নার ভূমিকা অনস্বীকার্য। হান্নার স্বামী ছিলেন শ্রীরামপুর কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যোশুয়া মার্শম্যান।

গত কয়েক বছরে শ্রীরামপুরে ডেনিশ আমলের বেশ কিছু ভবন পুরনো আদল অবিকল রেখে সংস্কার করা হয়েছে। হান্না হাউসও তাই হোক, শিক্ষামহল এবং পুরনো ঐতিহ্য রক্ষার পক্ষে থাকা এই শহর তথা হুগলির মানুষজন তাই চান।

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy